অলৌকিক কুর’আন

কিছুদিন আগে আমার সাথে একজন মুসলিমের কথা হয়। সে একজন জন্মগত মুসলিম, খুব সেক্যুলার ও না, খুব প্র্যাকটিসিং ও না, এই যুগে যেটা খুব স্বাভাবিক । কথাপ্রসঙ্গে কুর’আন এর একটা বিষয় এল। সে আমাকে যে কথাটা বলল সেটা শুনে আমি একটা বড়ো ধাক্কা খেলাম। আমার চিন্তায় ছিল না একজন মুসলিম এভাবে ভাবতে পারে। সে আমাকে যেটা বলেছে-

” কুর’আন যে আল্লাহর বানী এটা কে প্রথম দাবি করেছেন? মুহাম্মাদ(স). তিনি যে আল্লাহর মেসেঞ্জার এটা কে প্রথম দাবি করেছেন ? মুহাম্মাদ(স). তাহলে তিনি যে সত্যি বলেছেন তার প্রমান কি? ”

আমি তাকে জিগেস করেছি তাওরাত, যাবূর, ইঞ্জীল গ্রন্থ ও তাদের মেসেঞ্জারদের নিয়ে তার মতামত কি। সে একই কথা বলেছে। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম । ঘটনাটা নিয়ে আমি দিনের পর দিন চিন্তা করেছি এবং কিছু কিছু বাস্তব সত্য আমি বের করেছি। আমি চেষ্টা করেছি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার।

এই প্রশ্নটি একটি লুপের মতন গত সাড়ে ১৪শ বছর ধরে পৃথিবীতে ঘুরছে। কুর’আন যে আল্লাহর বানী তার কি প্রমান আছে? কি প্রমান যে এটি কোন মানুষ লেখেনি? কি প্রমান যে এটি মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব না? যদি এটি সরাসরি অবিকৃত অবস্থায় পৃথিবী, মহাকাশ, এমনকি মহাবিশ্বের বাইরে থেকেই আসে, নিশ্চয়ই স্রষ্টা এর মধ্যে প্রমান রেখে দিয়েছেন? কি সেইগুলো? আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি এই অলৌকিক বইটিকে। আসুন আমরা স্বচ্ছ যুক্তি দিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাই।

আপনি একজন মুসলিম। আমি একজন মুসলিম। আমরা জন্ম থেকেই মুসলিম। আমাদের বাবা মা মুসলিম না হলে আজকে হয়ত আমরা মুসলিম হতেও পারতাম, না হওয়ার চান্স বেশি ছিল। আমরা জানি যে ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম। আমরা জন্ম থেকেই জানি যে কুর’আন আল্লাহর কথা। আমরা আরবি পড়তে শিখেছি, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র রীডিং পড়া। আমরা আরবি ভাষা জানিনা। এরজন্য আমরা অনুবাদ পড়ি। কিন্তু অনুবাদ আল্লাহর কথা না, অনুবাদ মানুষের লেখা। মানুষের লেখা যতই ভাল হোক, সেটা মানুষের লেখা। আর বেশিরভাগ অনুবাদ পড়ে কারো ভাল লাগেনা, ঘুম আসে, একটু পড়ার পর ভারি ভারি কথা সহ্য করতে না পেরে আমরা রেখে দেই। আমাদের প্রত্যেকের বাসায় কুর’আন আছে। আপনি তো নিজের চোখেই দেখেন সেটা নিয়ে কি কি করা হয়। বয়স্করা সেটা সুর করে পড়ে, কেউ কেউ সেটার তাফসীর পড়ে, কেউ সেটা মুখস্থ করে। বিভিন্ন সময়ে এটার আয়াতকে কোটেশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, ওয়াজ-মাহফীল-মিলাদে ব্যবহার করা হচ্ছে, কুর’আন রিডীং দিয়ে খতম করা হচ্ছে।

সত্যি কথা হচ্ছে, কুর’আন আল্লাহর বানী এটা আমরা প্রথমত বিশ্বাস করেছি কারন আমরা মুসলিম। আপনি নিজেকে মনের গভীর থেকে প্রশ্ন করুন, আপনি খ্রীষ্টান হলে আপনি বিশ্বাস করতেন কিনা যে বাইবেল হচ্ছে সত্য গ্রন্থ, আর কুর’আন মিথ্যা ? আপনি কি কুর’আন কে পড়ে, বুঝে, এবং নিজের চোখে এর অলৌকিক ব্যাপারগুলো দেখে বিশ্বাস এনেছেন, নাকি আগে থেকেই আপনার বিশ্বাস ছিল, কুর’আন সেই বিশ্বাসে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছিল মাত্র? আমার কাছে তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর, আছে। আমি বাইবেল পড়ি। আমি দেখেছি সেটায় বিকৃত কথা আছে। আমি বাইবেল বিশ্বাস করি, কিন্তু সেটার সব কথা না। আসল বাইবেল এসেছিল হিব্রু ভাষায়, সেগুলো মানুষ বিকৃত করেছে।

কুর’আন আল্লাহর বই এটা বিশ্বাস করা সত্ত্বেও ছোটবেলা থেকে দিনদিন কুর’আন আমাদেরকে আকর্ষন করেনি, বরং আমরা কুর’আন থেকে দূরে সরে গেছি। কুর’আন আমাদের কাছে শুধু একটা বই, Just a Normal Book. এর বেশি কিছু নয়। বরং স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি-র বইগুলো আমরা কুর’আন এর চেয়ে অনেক বেশি পড়ি, তিন গোয়েন্দার প্রতি আমাদের যে আগ্রহ কুর’আন এর প্রতি আমাদের তার ধারেকাছেও কোন আগ্রহ নেই। আমরা কুর’আন পড়ি নেকি ও সওয়াবের জন্য, তাজ্‌উইদ সহকারে তিলাওয়াতের জন্য। এটি আমাদের ঘরের তাকের উপর চরম অবহেলায় পড়ে থাকে। আপনি শেষ কবে মন থেকে আগ্রহ নিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী জানার জন্য ও বোঝার জন্য কুর’আন পড়েছেন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। আপনি যে আরবি পড়েছেন আপনি কি কিছু বুঝেছেন? নাকি কোনদিনও অনুবাদ পড়ে আপনি মনের মধ্যে বিশাল কোন ধাক্কা খেয়েছেন? আপনি খাননি, আমি জানি। আমিও খাইনি কখনো। কেন এমন হচ্ছে? আমরা কেন আল্লাহর কথাকে উপলব্ধি করতে পারছি না?

এই হল উত্তর। আমরা আরবি ভাষা, গ্রামার, আরবি সাহিত্য সম্পর্কে ১০০ ভাগ অজ্ঞ। সে কারনে বেশিরভাগ মানুষ কুর’আন কে শুধু রীডিং পড়তে পারে, এর ভেতরে ঢুকতে পারেনা। তারা যেটা বিচার করে, সেটা তাদের অজ্ঞতা থেকে, “তারা কি মনে করে” সেটা থেকে, “তারা কতটুকু কুর’আন পড়তে পারে” সেই জ্ঞান থেকে। আপনি যদি ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়তে যান, আপনাকে ইংরেজী শ্রেষ্ঠ সাহিত্যগুলো পড়ানো হবে, যেমন- শেক্সপিয়ার, চার্লস ডিকেন্স। আপনাকে শেখানো হবে, কিভাবে তারা বাক্য বানাতেন, কিভাবে তারা বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতেন। তেমনি আপনি যখন আরবি সাহিত্য শিখতে যাবেন, আপনাকে কুর’আন শিখানো হবে। কারন এর উপরে পৃথিবীতে কোন সাহিত্য নেই আর আসবেও না, এমনকি পৃথিবীর বাইরেও নেই। আমি আরবি ভাষা ও কুর’আন এর একজন ছাত্র, একটি ইউনিভার্সিটি তে আমি পড়ি। আমার জ্ঞান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এই প্রায় শুন্য জ্ঞান নিয়েও আমি নিজের চোখে কুর’আন এর যেই পরিমান অলৌকিক জিনিস দেখেছি, আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি । অথচ আমি একসময় ভাবতাম যে একটা সুরা বানানো আর এমন কি কঠিন কাজ, কয়েকটা আরবি আয়াত বসিয়েই দিলেই তো হয়ে যায়। তারপর আমি আবিষ্কার করলাম, আল্লাহ্‌ কুর’আনে কমপক্ষে ৪ বার বলেছেন- যদি ক্ষমতা থাকে এর মতন বা এরচে ভাল কোন সূরা বানিয়ে নিয়ে আসো আর সাক্ষী নিয়ে এস ( আল-ইসরা ৮৮, হূদ ১৩, ইউনুস ৩৮, বাকারাহ ২৩-২৪) । বহু অমুসলিম নকল কুর’আন বানানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু সেগুলো দিয়ে সাধারন মানুষকে প্রতারিত করা গেলেও ভাষাবিদরা জাল কুর’আন দেখামাত্র বুঝতে পারেন।

মিরাকল বলে আরবি ভাষায় কোন শব্দ নেই। কুর’আনে কখনো বলা হয়নি এটা একটি “মিরাকল” . যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে “এ’জাজুল কুর’আন”। এ’জাজ একটি ভার্ব বা ক্রিয়াপদ। এটি এসেছে আ’জাজ থেকে। আ’জীজ মানে হচ্ছে হাটু গেড়ে নতজানু হয়ে বসে পড়া( Fall on your knees) বা অক্ষমতা(Incapable). যে কোন কিছুকে অক্ষম করে দেয় তাকে আরবিতে এ’জাজ বলে। কতটুকু অক্ষম? উদাহরন দেই। একজন লোক রাস্তা পার হচ্ছে। একটা ট্রাক ভীষন গতিতে যাচ্ছে, লোকটি দেখেনি। ঠিক শেষ মূহুর্তে সে দেখলো একটা ট্রাক তার গায়ের উপর উঠে যাচ্ছে। মৃত্যুর ঠিক আগে সামান্য এক মূহুর্তের জন্য তার মনে হয়েছিল যে সে নড়তে পারছে না, পাথরের মতন অক্ষম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার যে অনুভূতি হয়েছিল সেটা হচ্ছে “আ’জীজ” আর ট্রাকটি ছিল “এ’জাজ” । কুর’আন নিজেকে এ’জাজ বলেছে কারন এটি এত বেশি শক্তিশালী, কেউ যদি এটাকে মিথ্যা প্রমান করতে আসে, হাটু গেড়ে অক্ষমতা প্রকাশ করা ছাড়া তার আর কিছুই করার নাই, ঠিক যে ধরনের কিছু অনুভূতি আমার হয়েছে এবং যতবার আমি সেগুলো আবার পড়ি, আবার নতুন করে হয়। এই “অলৌকিক কুর’আন” নামের আর্টিকেল গুলোতে আমি যদিও মিরাকল শব্দটি ব্যবহার করব, কিন্তু আসলে আমি সবসময় বুঝাব যে কুর’আন হচ্ছে একটি এ’জাজ। মিরাকল শব্দটি কুর’আনের জন্য তুচ্ছ একটি শব্দ।

যে ত্রিকোণমিতি পড়েনি, সে স্বপ্নেও কল্পনাও করতে পারবেনা যে একটা চাঁদা দিয়ে একটা পাহাড়ের উচ্চতা বের করে ফেলা যায় মাটিতে বসেই। তার কাছে এটা হয় মিথ্যা, নয় জাদু, নয় অলৌকিক। একই জিনিস হয়েছে কুর’আন নিয়ে হাজার বছর ধরে। যারা বিশ্বাস করেনি তারা বলেছে এটা মিথ্যা, বা যাদু। কিন্তু, আপনি আমার কথা লিখে রাখেন, যে কেউ কুর’আন নিয়ে এক বিন্দু পড়াশুনা করেছে, যে কেউ এটার এমনকি ১% জেনেছে, সে আবেগে সিজদায় মাথা ঠুকতে বাধ্য। কিন্তু একটা শর্ত আছে, তাকে নিরপেক্ষভাবে পড়তে হবে। এমন অনেক অবিশ্বাসী আছে, যাকে আপনি হাজার প্রমান দিন, কোন লাভ নেই, তার কথা একটাই- ” সব মিথ্যা। সব বানান। ধর্ম বলে কিছু নেই। সব মানুষের বানানো। ”

কুর’আন নিয়ে গত সাড়ে ১৪শ বছর ধরেই তাই ভাষাবিদ ও বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে আসছেন। আমরা সবাই জানি কুর’আন এ এমন সব বৈজ্ঞানিক তথ্য দেওয়া হয়েছে যা আধুনিক বিজ্ঞান শত শত বছর রিসার্চ করে বের করেছে। Astronomy, Expanding Universe, Relativity, Pulsar, Orbit, Black Holes, Rotation of Earth, Barrier between Seas, Fingerprint, Human Embryology, Human Psychology, Mathematics সহ বহু জিনিশ যা অবিশ্বাসীরা কেউ কোন যুক্তি দিয়ে দেখাতে পারেনি কিভাবে এগুলো প্রাচীন একটা বইয়ে লেখা আছে আগে থেকেই।

তাহলে কি এগুলোই কুর’আন এর মিরাকল? উত্তর হচ্ছে- হ্যা এবং না। না কেন? আপনি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। আল্লাহ্‌ এমন এক সময়ে এই তথ্যগুলো দিয়েছেন যখন থেকে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি শুরু করেছে। আল্লাহ্‌ জানতেন মানুষ এগুলো আবিস্কার করবে, এবং তারপর এটা বের করবে যে এগুলো আগে থেকেই আল্লাহ্‌ জানেন !! কিন্তু যেই মানুষ কখনো বিজ্ঞান পড়েনি সে কি করবে? আপনি হয়ত মানুষের ভ্রুনবিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন। কিন্তু যে লোকটা পড়াশুনাই জানেনা, জীবনে বিজ্ঞান পড়েনি, তার জন্য কুর’আনের ভ্রুনবিদ্যার আয়াতটি কোন মিরাকল নয়। তার জন্য এটা খুব সাধারন একটা আরবি বাক্য ছাড়া আর কিছুই না।

তাহলে কি হবে? তাহলে হবে। কারন পুরো কুর’আন টাই একটা মিরাকল। আল্লাহ্‌ যেভাবে কথা বলেছেন এটাই একটা মিরাকল। যেভাবে তিনি শব্দ নিয়েছেন, বাক্য তৈরী করেছেন, ঘটনা সাজিয়েছেন, যেভাবে যিনি এই সাহিত্যটি তৈরী করে আমাদেরকে দিয়েছেন, পুরাটাই অলৌকিক ও মানুষের ক্ষমতার বাইরে। কুর’আনের যেই লাইনগুলো “আমার জন্য” মিরাকল, সেটা আপনার জন্য মিরাকল না-ও হতে পারে। আমি কুর’আন পড়ে দেখেছি যে, হুবহু আমার জীবনের কোন একটা ঘটনার সাথে মিলে যায় এমন লাইন আছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি আমি যেই কয়টি আয়াত আমার জীবনে যখনি প্রয়োগ করেছি, সাথে সাথে আমার জীবনে পরিবর্তন ঘটে গেছে। এটাই “আমার” জন্য কুর’আনের মিরাকল।

মুসলিমদের একটা সমস্যা হল, যখন কেউ কুর’আন কে মিথ্যা বলে বা অস্বীকার করে, তারা রেগে যায়, তর্ক শুরু করে, প্রমান দেখানো শুরু করে। আপনাকে বুঝতে হবে, কেউ হারার জন্য ডিবেট করতে আসে না। মানুষ ডিবেট করেই এই কারনে, যাতে সে তার যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষ কে গুড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই প্রথমদিন যখন আপনি একজন নাস্তিককে উত্তরে বেশি কিছু বলতে পারবেন না, আপনি বাসায় গিয়ে পড়াশুনা করে পরেরদিন আবার তার কাছে আসবেন এবং দাবি করবেন যে আপনি সঠিক এবং সে ভুল ।তার পরেরদিন সে আবার আপনার কাছে আসবে কুর’আনের কোথায় কি ভুল বা অসংগতি আছে সেগুলো নিয়ে। এভাবে কাদা ছোড়াছোড়ি চলতেই থাকবে। আপনি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ্‌ খুব ভাল করেই জানতেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষ সবসময়ই দাবি করবে যে কুর’আন আসলে মানুষের বানানো বা মুহাম্মাদ(স) এর বানানো। সেজন্য আল্লাহ্‌ কুর’আনের মধ্যে এমনভাবে এর প্রমান রেখে দিয়েছেন যাতে মানুষ এটাকে অবিশ্বাস করার বিন্দুমাত্র কোন সুযোগ না পায়। কিন্তু একটা শর্ত আছে। আগে মানুষকে এই প্রমানগুলো জানতে হবে। আপনি যত নাস্তিক দেখবেন চারপাশে, এরা কেউ কুর’আন নিয়ে পড়াশুনা করেনি কখনো। এরা আগে বিশ্বাস করেছে যে “স্রষ্টা বলে কেউ নেই”, কাজেই এরপর আপনি এদের যাই যুক্তি দিবেন এরা আপনার সাথে তর্ক করতেই থাকবে। এদের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না।

আপনি মুসলিম, আমি মুসলিম। আমরা সবাই বিশ্বাসী। তাহলে কেন এখন আবার নতুন করে কুর’আন কে জানতে হবে ?? আমরা তো বিশ্বাস করিই যে এটা আল্লাহর কথা? আপনি যদি আমার লেখা আর-রাহমান () আর সালাতের শব্দগুলোর উপলব্ধির উপর লেখা() দুইটি পড়েন, আপনি আবিষ্কার করবেন আল্লাহ্‌ যে কতটা মহান তা আপনি আগের চেয়ে আরো বেশি করে বুঝতে পারছেন। আপনি আরো বেশি করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারছেন। এই সামান্য কয়েকটি তথ্য যে আপনার বিশ্বাসকে কতটুকু বাড়িয়ে দিবে তা আপনি পড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারবেন। একইভাবে আপনি কুর’আন কে যত ভাল জানবেন, আপনি বুঝতে পারবেন যে আল্লাহ্‌ কিভাবে কথা বলেন, আল্লাহ্‌ কিভাবে বাক্য তৈরী করেন, আল্লাহ্‌ কিভাবে শব্দ বেছে নেন। তারপরে আপনি অবাক হবেন। তারপরে আপনি আমার মতন স্তব্ধ হয়ে বসে থাকবেন । তারপরে আপনার মনে হবে আপনি কুর’আনের মহীমার কাছে পরাজিত। তারপরে আপনি উপলব্ধি করবেন কিভাবে কুর’আন আপনার চিন্তা-চেতনার মধ্যে বসে যাওয়া শুরু করেছে। আপনার মনে হবে আপনি কুর’আনকে অনুভব করতে পারছেন, আপনি আল্লাহকে অনুভব করতে পারছেন। আর তখন আপনি আবার নতুন করে বিশ্বাস আনবেন যে এই বইটি এই মহাজগতের বাইরের থেকে এসেছিল।

এই নিয়মিত লেখাগুলোতে আমি একটি সাহিত্য বই হিসেবে কুর’আনের অলৌকিক ব্যাপারগুলো একটার পর একটা তুলে ধরব। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কিভাবে এটি একটি মিরাকল। বৈজ্ঞানিক তথ্য গুলোও আমি আস্তে আস্তে তুলে ধরব। আমি যতদিন জীবিত আছি ততদিন আমি সময় নিয়েছি এটার জন্য। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে আল্লাহ্‌ কুর’আন শিখিয়েছেন ২৩ বছরে। আমারও কোন তাড়া নেই।

অলৌকিক কুর’আন ২য় পর্ব- গণিতবিদ্যা

১ম পর্ব

মিরাকল বা অলৌকিকতা নিয়ে মানুষের প্রবল আগ্রহ সৃষ্টির শুরু থেকেই। সুপারন্যাচারাল ব্যাপারগুলো মানুষকে আকৃষ্ট করে এই কারনে যে, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার পর-ও এগুলোর মধ্যে ফাঁক রয়েই যায়। তখন মানুষ বাধ্য হয় বিশ্বাস করতে যে এটা “বিজ্ঞানের বাইরে অন্য কিছু” বা “এটাকে বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারেনা” . আজকের দিনেও দেখবেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য, ইউ.এফ.ও, এলিয়েনের অস্তিত্ব, মাছ মাংশ ফল মূল বিভিন্ন জিনিসে আল্লাহর নাম, এসব নিয়ে মানুষের মাতামাতির কোন শেষ নেই। ঠিক এক-ই জিনিস হয়ে আসছে স্রষ্টা ও ধর্ম কে নিয়ে আদিমকাল থেকেই । কিছু মানুষ সবসময়ই স্রষ্টার প্রমান দেখতে চেয়েছে, অলৌকিক কিছু দেখতে চেয়েছে। দেখার পরেও যে তারা খুব বিশ্বাসী হয়ে গেছে এমন কিন্তু নয়।

নবী মূসা(আ) এর একটা লাঠি ছিল, সেটা দিয়ে বাড়ি দিয়ে তিনি মেষপালের জন্য গাছের পাতা পাড়তেন। আল্লাহ্‌ তাঁর লাঠিটাকে একটা ক্ষমতা দিয়েছিলেন। সেটা সাপ হয়ে যেতে পারত। এটা অবশ্যই আল্লাহর একটা নিদর্শন। কিন্তু এই ধরনের নিদর্শনের একটা সমস্যা আছে। ধরুন আমার দাদা সরাসরি নিজের চোখে মূসা(আ) এর লাঠিটা দেখেছিলেন। তিনি তার সারাজীবন ধরে এই লাঠিটার কথাই বলে গেছেন। যতবার তিনি এটার কথা বলতেন, তিনি আবেগে থরথর করে কাঁপতেন আর তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ত। আমার বাবা, চাচারা সবাই এগুলো শুনেছেন তার কাছ থেকে। আমরা আবার তাদের কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু এটা আমাদের কাছে শুধুমাত্র একটা অলৌকিক গল্প, এর বেশি কিছু নয়। গল্পটা যদিও আমরা বিশ্বাস করি, কিন্তু আমার দাদার আবেগ আর আমাদের আবেগের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। একই জিনিস ঘটবে যখন আপনি আমার কাছ থেকে ঘটনাটা শুনবেন। আপনি একটু চোখ বড়ো বড়ো করবেন, হয়ত বলবেন – ওয়াও । ব্যস, এই পর্যন্তই। সময়ের সাথে সাথে মিরাকলটা ম্লান হতে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এক সময় এটা শুধুই একটা ইতিহাসের গল্প হয়ে থাকবে।

যত নবীদের যত মিরাকল( মু’যেযা) ছিল, সবগুলোই সময়ের সাথে সাথে চলে গেছে। আমাদের কাছে এগুলো শুধুই গল্প। আর একটা গল্প বিশ্বাস ও করা যায়, অবিশ্বাস ও করা যায়, কে এসে প্রমান দেবে? শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) কেও নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ একটা মিরাকল দিয়েছেন, যাতে আমরা সেখান থেকে সন্দেহতীতভাবে বের করতে পারি যে আল্লাহ্‌ আসলে আছেন, এবং তিনি মহাজগতের স্রষ্টা, এবং তাঁর অসীম জ্ঞানের কিছু সরাসরি নমুনা। এবং সেই মিরাকলটাকে হতে হবে স্থায়ী, কারন তাঁর পরে আর কোন আল্লাহর নবী আসবে না। মিরাকলটা এমন হতে হবে যে যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে, ততদিন এটা মানুষ নিজের চোখে দেখবে। অবিশ্বাস করার প্রত্যেকটি নুন্যতম সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা থাকতে হবে এই মিরাকলের।

এই পর্বে কুর’আনের ভিতরে যে গাণিতিক প্যাটার্নগুলো আছে তার কিছু কিছু তুলে ধরা হয়েছে। “কিছু কিছু” কেন? কারন, হাজার বছর ধরে গবেষনার পরও মানুষ এখনো কুর’আনের অনেক কিছুর ব্যাখ্যাই বের করতে পারেনি। কুর’আন রীডিং দিয়ে পড়ে এর রহস্যময়তা বের করা অসম্ভব। কিন্তু আপনি যখন নিজের চোখে এই হিসাবগুলো দেখবেন, আপনার ইচ্ছা করবে চিৎকার করে কাদঁতে। আপনি চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন যে এই ছোট্ট আরবি বইয়ের কথাগুলো সরাসরি আল্লাহ্‌র মুখ থেকে বের হওয়া কথা । ( এটা শুনে আপনি ভাবা শুরু করবেন না যে, আল্লাহর মানুষের মতন মুখ আছে। আল্লাহর চেহারা শুধুমাত্র “আল্লাহর নিজের মত” ) . আপনি চিন্তা করুন যে, আল্লাহ আপনার জন্য চিন্তা করে কিছু কথা বানিয়েছেন এবং আপনাকে তাঁর কিছু কথা দিয়েছেন চিঠির মত করে। এই কথাগুলোই আপনার সাথে আল্লাহর একমাত্র যোগাযোগ এই পৃথিবীতে। এর পরেরবার যখন আপনি কুর’আন হাতে নিবেন, এই কথাগুলো মনে করবেন। এই বইয়ের কথাগুলো এই মহাবিশ্বের বাইরে লেখা হয়েছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান দুটি জগতের মধ্যে যোগাযোগের প্রাচীন বইটি আল্লাহ্‌ আপনাকে গিফট দিয়েছেন। কুর’আনের গণিতবিদ্যা এখান থেকে শুরু হল। ব্র্যাকেটে যখন যেই ছবির লিঙ্কগুলো দেওয়া থাকবে সেটা দেখার জন্য অনুরোধ করা হল। এই আর্টিকেল গুলো আমি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগের জন্য তৈরি করি, তারপরো ফেসবুক এ অনেকে পড়েন, সেজন্য পাশে ছবির লিঙ্ক দিয়ে দেই। আপনি যদি গণিতের এই পুরো আর্টিকেল টি বুঝতে চান অবশ্যই ছবিতে ক্লিক করবেন।

কুর’আনে আছে-
[] ১১৪টি সূরা
[] ৬২৩৬ টি আয়াত ।
[] ৭৮,২৫৭ টি শব্দ

A,B,C দিয়ে আমি আলাদা আলাদা ৩টি গ্রুপে ভাগ করেছি বিষয়গুলোকে।

A. ১৯ রহস্যঃ

পুরো কুর’আন একটি অকল্পনীয় জটিল গাণিতিক প্যাটার্ন দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ কুর’আনে এক জায়গায় ১৯ সংখ্যাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, জাহান্নামের ১৯ জন পাহারাদার আছে, আর তারা হচ্ছেন ফেরেশতা।

“There are nineteen in charge of it.” (Qur’an, 74:30)

কিন্তু মানুষ গবেষনা করে বের করেছে যে, কুর’আনে ঘুরে ফিরে বিভিন্ন হিসাব নিকাশে বার বার ১৯ সংখ্যাটি পাওয়া যায়।

[] সূরা ১১৪টি। ১৯ X ৬ = ১১৪

[] সবগুলো সূরার নম্বর যোগ করলে ( ১+২+৩+৪+…+১১৪) দাঁড়ায় ৬৫৫৫। ১৯X৩৪৫ = ৬৫৫৫ ।

[] আল্লাহ শব্দটি কুর’আনে আছে ২৬৯৮ বার। ১৯X১৪২= ২৬৯৮

[] ১ম যে সূরাটি নাযিল হয়েছিল সেটি ছিল ৯৬ নম্বর সূরা, সূরা আলাক। শেষের দিক থেকে গুনলে এটি ১৯ নম্বর সূরা।

[] প্রথম নাযিল হয়েছিল সূরা আলাকের ১-৫ আয়াত। প্রথম ৫টি আয়াতে মোট শব্দ ১৯টি। ১ম ৫টি আয়াতে মোট অক্ষর ৭৬টি (১৯X৪= ৭৬).  দেখুন ছবি

[] সূরা আলাক-এ মোট আয়াত ১৯টি আর মোট শব্দ ২৮৫ টি। ১৯X১৫=২৮৫

[] শেষ সূরা নাযিল হয়েছে সূরা আন-নাস্‌র। মোট শব্দ ১৯টি। দেখুন ছবি

[] সূরা নাস্‌র এর প্রথম আয়াতে আল্লাহর সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। আয়াতে মোট অক্ষর ১৯টি। দেখুন ছবি

[] বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এ মোট অক্ষর ১৯ টা। দেখুন ছবি

[] ১১৪ টি সূরার মধ্যে ১১৩টি শুরু হয়েছে “বিসমিল্লাহ…” দিয়ে। ৯ নং সূরা, সূরা আত-তাওবার শুরুতে কোন বিসমিল্লাহ নেই। ২৭ নং সূরা আন-নামল হচ্ছে একমাত্র সূরা যেখানে ২ বার বিসমিল্লাহ আছে, একবার প্রথমে, একবার আয়াত ৩০ এ। সূরা আত-তাওবা থেকে গোনা শুরু করলে সূরা আন-নামল হচ্ছে ঠিক ১৯তম সুরা !!! দেখুন ছবি

আরো আছে। আত তাওবা ৯ নম্বর সুরা। আন-নামল ২৭ নম্বর সুরা। ৯ থেকে ২৭ পর্যন্ত যোগ করলে হয় ৩৪২। (9 + 10 + 11 +12 +13 +14 +15 +16 + 17 + 18 + 19 + 20 + 21 + 22 + 23 + 24 + 25 + 26 + 27) । ১৯X১৮= ৩৪২ ।

[] আর রাহমান শব্দটি কুর’আনে আছে ৫৭ বার। ১৯X৩= ৫৭

[] কুর’আনে ৩০টি আলাদা আলাদা সংখ্যা বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। রিপিটিশন না ধরে যদি প্রত্যেকটি সংখ্যাকে যোগ করা হয় তাহলে আসে ১৬২,১৪৬ । ১৯X৮৫৩৪= ১৬২, ১৪৬ . দেখুন ছবি

[] ৫০তম সূরা হচ্ছে সুরা Qaf । এটার প্রথম অক্ষর “Qaf” । Qaf অক্ষরটি এই সূরায় আছে ৫৭ বার (১৯X৩=৫৭) . এই সূরায় আয়াত আছে ৪৫ টি। এবার যদি যোগ করি,তাহলে হয়, ৫০+৪৫= ৯৫। ১৯X৫=৯৫।

১৯ একটি প্রাইম নাম্বার। যে নাম্বার কে অন্য কোন নাম্বার দিয়ে ভাগ করা যায়না তাকে প্রাইম নাম্বার বলে। আল্লাহ্‌ কেন ১৯ দিয়ে পুরো কুর’আনের মধ্যে একটি কোড রেখেছেন তা মানুষের জ্ঞানের বাইরে। আমরা শুধু এটুকু ধারনা করতে পারি যে , আল্লাহ্‌ নিজেই বলেছেন তিনি কুর’আন কে নিজে রক্ষা করবেন, এগুলো হয়ত তাঁরই কিছু নিদর্শন। আরেকটা কারন হচ্ছে আপনি যখন নিজের চোখে যাচাই করে এই জিনিশগুলো দেখবেন, আপনি নিজেই বুঝবেন আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে।

B. সমার্থক আর বিপরীত শব্দঃ

পুরো কুর’আনে আল্লাহ্‌ বিশেষ বিশেষ কতগুলো শব্দ রীপিট করেছেন। মাঝে মাঝে বিপরীত শব্দ ব্যবহার করেছেন। আসুন একটু হিসাব করে দেখা যাক।

[] দিন ( Yawm) শব্দটি কুর’আনে আছে ৩৬৫ বার। দিনের বহুবচন হচ্ছে Ayyam আর Yawmayn. বহুবচন দুটি মোট এসেছে ৩০ বার। মাস শব্দটি ( Shahar) এসেছে ১২ বার। কোন মিল পাচ্ছেন ?

একবচন, বহুবচন ও সব মিলিয়ে “দিন” কথাটি এসেছে মোট ৪৭৫ বার। ১৯X২৫= ৪৭৫. আরো একটি ব্যাপার লক্ষনীয় যে, সূর্য নিজের অক্ষের উপর একবার পুরো ঘুরতে সময় নেয় ২৫ দিন।

[] পৃথিবী ( Dunya) আর পরকাল ( akhirah) দুটি শব্দ আছে ১১৫ বার করে।

[] সাত আসমান ( Seven heavens/ Sab’a Samawati) এর কথা বলা আছে ঠিক ৭ বার।

[] বিশ্বাস ( Imaan) আর অবিশ্বাস ( Kuf’r) দুইটি শব্দই এসেছে ২৫ বার করে।

[] জান্নাত আর জাহান্নাম দুটি শব্দ এসেছে ৭৭ বার করে।

[] শয়তান শব্দটি এসেছে ৮৮ বার। বিপরীতে ফেরেশতা( মালা’ইকা) এসেছে ৮৮ বার।

[] পুরুষ ও নারী দুটি শব্দই কুর’আনে এসেছে ২৩ বার করে। মানুষের ক্রোমোজম সংখ্যা হচ্ছে ৪৬. বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকে ২৩ টি করে ক্রোমোজম নিয়ে একটি সন্তান তৈরী হয়।

[] সূর্য ( শামস) আর আলো (নূর) দুটি শব্দ এসেছে ৩৩ বার করে।

[] পূন্যবান ( আল-আবরার) এসেছে ৬ বার। পাপী ( ফুজ্জার) এসেছে ৩ বার। আল্লাহ সব সময় শাস্তির তুলনায় পুরস্কারের পরিমান দ্বিগুণ করে দিবেন বলেছেন। ঠিক একইভাবে ‘আযাব’ শব্দটি যতবার এসেছে, ‘সওয়াব” তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ আযাব ১১৭ বার, সওয়াব ২৩৪ বার।

[] যেমন কাজ করা হয়, তেমন ফল পাওয়া যায়। আল্লাহ্‌ এইগুলোকেও সমান সমান করে বলেছেন। যাকাত দিলে বরকত হয়। তাই যাকাত শব্দটি এসেছে ৩২ বার, বরকত এসেছে ৩২ বার। “গাছের চারা উৎপাদন” করলে “গাছ” হয়, তাই দুটি শব্দ এসেছে ২৬ বার করে। কোন মানুষ হেদায়াত পেলে তার প্রতি রহমত বর্ষিত হয়, তাই এ দুটো শব্দ এসেছে ৭৯ বার করে।

[] আব্‌দ মানে দাসত্ব, আর আবীদ মানে দাস। দাসের কাজ দাসত্ব করা, তাই দুটি শব্দই এসেছে ১৫২ বার করে।

[] “নেশা” করলে “মাতাল” হয়, তাই দুটি শব্দই এসেছে ৬ বার করে।

[] সূরা আ’রাফের একটি আয়াত হল – “যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের উদাহরন হচ্ছে কুকুরের মতন” ।

“”যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে” এই বাক্যটি কুর’আনে আছে ৫ বার। যেহেতু তাদের উদাহরন কুকুরের সাথে, তাই কুকুর “আল কালব” কথাটিও এসেছে ৫ বার।

[] “মানুষ’ ( Insaan) কথাটি এসেছে ৬৫ বার। আর মানুষ বানানোর উপকরনগুলো আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন সূরায় বলা হয়েছে। মানুষ বানানোর উপকরনগুলো আলাদা আলাদা করে যদি দেখা হয় যে কোনটি কতবার এসেছে-

Soil (turab) = 17
Drop of Sperm (nutfah)= 12
Embryo (‘alaq) =6
A half formed lump of flesh (mudghah)= 3
Bone (‘idham) =15
Flesh (lahm) =12

সবগুলো যোগ করলে আসে ঠিক ৬৫।

[] এটা একটু কঠিন। কুর’আনে Land কথাটি এসেছে ১৩ বার। Sea কথাটি এসেছে ৩২ বার। যোগ করলে হয় ৪৫।

যদি আমরা এখান থেকে বের করতে চাই, স্থলভাগ কত শতাংশ , তাহলে, {(১৩X১০০) / ৪৫ } = ২৮.৮৮৮৮৮৮৮৮৮৮৮৯ % ( এগারটি ৮, একটি ৯ )

যদি আমরা বের করতে চাই, জলভাগ কত শতাংশ , তাহলে, {(৩২X১০০) / ৪৫}= ৭১.১১১১১১১১১১১১ ( বারটি ১)

বর্তমান পৃথিবীতে জল ও স্থলের পরিমান হুবহু এই একই।

[] নবী ঈসা(আ) ও নবী আদম (আ) এর তুলনা-

সূরা আলে ইমরান। আয়াত ৫৯. আল্লাহ বলেছেন- “আল্লাহর কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমের মতো” ।

আসুন ব্যাখ্যা করি। নবী ঈসা(আ) ও নবী আদম(আ) কেউই মানুষের মাধ্যমে জন্ম নেননি । আদম (আ) কে আল্লাহ্‌ বাবা-মা ছাড়া তৈরী করেছিলেন, ঈসা (আ) কে বাবা ছাড়া তৈরী করেছিলেন।

কুর’আনে “আদম” ও “ঈসা” দুইটি নাম এসেছে ২৫ বার করে। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন, এনাদের তুলনা তাঁর কাছে একই রকম, তাই এদের নামের সংখ্যাও এক রাখা হয়েছে।

এখানেই শেষ হয়নি, আরো আছে। এই ছবিটি লক্ষ্য করুন । লাল বক্সটি হচ্ছে একমাত্র আয়াত ( সুরা ৩, আয়াত ৫৯) যেখানে তাঁদের দুইজনের নাম একিসাথে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম থেকে গোনা হলে এই আয়াতটিতে ৭ম বার এই নামদুটি ব্যবহার করা হচ্ছে। নিচ থেকে গোনা হলে এই আয়াতটিতে ১৯ তম বার এই নামদুটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবারো সেই ১৯. আপনি গুনে দেখতে পারেন।

না, এখনো শেষ হয়নি। উপর থেকে আবার গোনা হলে এই নামদুটি ১৯ তম বার ব্যবহার হয়েছে সূরা নম্বর ১৯ এ ( সূরা মারইয়াম, নীল বক্স) . এই সূরায় “ঈসা” নামটি এসেছে আয়াত ৩৪ এ, আর “আদম” নামটি এসেছে আয়াত ৫৮ তে। আয়াত ৩৪ থেকে গোনা শুরু করলে আয়াত ৫৮ হচ্ছে ২৫ তম আয়াত। আর এদের দুইজনের নাম কুর’আন এ এসেছে ঠিক ২৫ বার করে। সেকারনেই ঈসা(আ) এর তুলনা হচ্ছে আদম(আ) এর মতন।

[] কুর’আনে ৭০ বার “That day” ( Yawma Izin) বাক্যাংশটি এসেছে। সেই দিনটি হচ্ছে কেয়ামতের দিন, তাই “The day of ressurection” ( Yawmal Qiyama) কথাটিও এসেছে ৭০ বার।

[] সালাহ ( Salah) হচ্ছে নামাজের একবচন। সালাহ শব্দটি এসেছে ৮৩ বার। নামাজের বহুবচন হচ্ছে “সালাওয়াত” ( Salawat). দিনে নামাজ পড়তে হয় ৫ বার। তাই সালাওয়াত শব্দটিও পুরো কুর’আনে এসেছে ঠিক ৫ বার।

[] জিহবা ( Tongue) দিয়ে উপদেশ ( Advice) দেওয়া হয়। দুটি শব্দই এসেছে ২৫ বার করে।

c. সূরার সাথে আয়াতের সম্পর্কঃ

[] সূরা আল- কাহফ, সুরা নম্বর ১৮. এই সুরাটির নামই হচ্ছে “গুহা” . এখানে কয়েকজন যুবকের একটা ঘটনা আছে। ঘটনাটা এরকম যে, কয়েকজন বিশ্বাসী যুবক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয় ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। আল্লাহ তাদেরকে ৩০৯ বছরের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। এখানে ৯ নম্বর আয়াত থেকে গুহাবাসীদের ঘটনাটা শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ২৫ নম্বর আয়াতে।

আয়াত ৯- আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল ?

আয়াত ২৫- তারা তাদের গুহায় অবস্থান করেছিল ৩০০ বছর, সাথে আরো ৯ বছর।

আসুন এবার দেখা যাক। আয়াত ৯ থেকে আয়াত ২৫ পর্যন্ত প্রত্যেকটি শব্দ সিলেক্ট করে যদি গোনা হয়, দেখা যায় এখানে ঠিক ৩০৯ টি শব্দই আছে। কাকতালীয় ???

[] কুর’আনের অনেক সূরার শুরুতেই কয়েকটি করে শব্দ আছে, যেমন- আলিফ লাম মীম, ইয়া সীন…ইত্যাদি। আসুন দেখা যাক এদের মধ্যে কোন প্যাটার্ন আছে কিনা।

সূরা আন- নামল। ২৭ নম্বর সূরা। মোট আয়াত আছে ৯৩ টি । এই সূরাটি শুরু হয়েছে দুটী শব্দ দিয়ে – ত্ব, সীন (ط س) । এই সূরাটির বৈশিষ্ট্য হল এটার সবগুলো আয়াত ও শব্দের মধ্যে-

ত্ব ( ط) আছে- ২৭ বার
সীন (س) আছে – ৯৩ বার।

এবার চিন্তা করুন। ২৭ নম্বর সূরা। আয়াত ৯৩ টি। শুরু হয়েছে যে দুটি অক্ষর দিয়ে সে দুটি অক্ষর এসেছে ২৭ বার ও ৯৩ বার।

[] সূরা ইয়া-সীন। প্রথম আয়াত হচ্ছে “ইয়া-সীন”. এই সূরায় ইয়া অক্ষর আছে ২৩৭ বার, সীন ৪৮ বার। যোগ করলে হয় ২৮৫ বার। ১৯X১৫ = ২৮৫. আবার সেই ১৯।

[] সূরা বাকারা। ২ নম্বর সূরা। মোট আয়াত ২৮৬. আমরা এর ১৪৩ নম্বর আয়াতটি দেখব।

আয়াত ১৪৩( অংশবিশেষ) – And thus We have made you a MIDDLE nation
অনুবাদ- এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি

এটা খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে, ২৮৬ আয়াত বিশিষ্ট সূরার ঠিক মাঝখানের আয়াতটি হচ্ছে এই ১৪৩ নম্বর আয়াত। ২৪৬/২= ১৪৩ . মনে রাখতে হবে কুর’আন নাযিল হয়েছিল মৌখিক ফর্ম এ, এটা কেউ লিখে রাখত না। আর সূরা গুলো ছোট ছোট অংশে নাযিল হোত। কিভাবে আগে থেকে না লিখে রেখে অনুমান করা সম্ভব কোন আয়াতটি হবে সূরার একদম MIDDLE আয়াত ??

[ ] সূরা নূহ। সূরা নম্বর ৭১ . মোট আয়াত ২৮. কয়েকটি হিসাব করা যাক। আল্লাহ্‌ কিভাবে নম্বর প্যাটার্ন সাজান আসুন দেখি।

* পুরা কুর’আনে “নূহ” শব্দটি আছে ৪৩ বার।
* ৭১-২৮= ৪৩ ( সূরা নূহ এর সূরা নম্বর থেকে আয়াত নম্বর বিয়োগ করলাম)
* “নূহ” নামটি এসেছে ২৮টি আলাদা আলাদা সূরায়।
* সূরা নূহ ( সূরা ৭১) এর আগের যে কয়টি সুরায় “নূহ” শব্দটি নেই, তাদের সংখ্যা হচ্ছে ৪৩. আর সূরা নূহ এর পরের যে কয়টি সুরায় “নূহ” শব্দটি নেই, তাদের সংখ্যাও হচ্ছে ৪৩ . আর নূহ শব্দটি কুর’আনে এসেছে ঠিক ৪৩ বার।

শেষ কথাঃ

আমি সবগুলো গাণিতিক উদাহরন দিতে পারিনি। কিছু কিছু আছে ভয়ঙ্কর জটিল। আর আমি কোন গণিতবিদ ও নই, আমি একজন সাধারন পড়াশুনা করা সাধারন মানুষ। যেগুলো আমার কাছে মনে হয়েছে সবাই বুঝতে পারবে আর নতুন করে এপ্রিশিয়েট করতে পারবে আমি সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। আর আমি আপনাকে রিমাইন্ডার দিলাম, আপনি চাইলে নিজেই শিখে নিতে পারবেন আমি জানি।

যারা দাবি করেছে বা করছে যে কুর’আন মানুষের লেখা, তাদেরকে যদি আপনি এইগুলোও দেখান, সবাই যে বিশ্বাস করে ফেলবে এমন কিন্তু নয়। অবিশ্বাসীরা সবসময়ই থাকবে। মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব এদের সাথে ডিবেট করা নয়, আমাদের দায়িত্ব হল কুর’আনকে ভালবাসা ও বোঝার চেষ্টা করা আল্লাহ্‌ কি পরিমান অসীম জ্ঞানী একজন সত্তা। একজন মুসলিম শিশু হিসেবে আমাকে ছোটবেলায় কুর’আন রিডিং পড়তে শেখান হয়েছিল, কিন্তু আমি বড়ো হয়েছি কুর’আনের বিন্দুমাত্র সংস্পর্শ ছাড়া। এই বইটি আমার কাছে কখনই ইন্টারেস্টিং মনে হয়নি, এই বইটির প্রতি আমার একধরনের Avoidal Tendancy তৈরী হয়ে গিয়েছিল। এবং আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এর পিছে একটি মানুষের একার যত না ভূমিকা, তার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা তার বাবা-মার, বাংগালী সমাজের প্রচলিত ঘুনে ধরা সনাতন ইসলাম-শিক্ষার। মুহাম্মাদ(স) ১৪০০ বছর আগে যেই ইসলাম শিখিয়ে গেছেন তার অনেকটাই আমরা বিকৃত করে ফেলেছি আমাদের এই উপমহাদেশে। বাসার কোন হুজুরের সাথে আপনি মন খুলে ইসলাম নিয়ে কখনো কথা বলতে পেরেছেন জীবনেও ? শেষ কবে আপনার বাবা মা আপনার সাথে কুর’আন নিয়ে কোন কথা বলেছেন? কোনদিনও কি খাবার টেবিলে বা অফিসে বা বন্ধুদের আড্ডায় আপনি কুর’আনের সৌন্দর্য নিয়ে কোন কথা শুনেছেন ? বা বলেছেন?

জীবনের একসময়ে এসে আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেছি যে – “আমি কতটা নিকৃষ্ট মানের মুসলিম যে আমি আমার স্রষ্টার কথাগুলোকে বোঝার কোন চেষ্টা করছি না ? ” আমি লজ্জা, গ্লানি ও অপরাধবোধে ভুগেছি। দোকানে গিয়ে তাফসীর ঘেটেছি। আমি দেখেছি সেগুলো ভয়ঙ্কর একঘেয়ে ভাষায় লেখা, সেগুলো আমার মতন একজন এভারেজ মুসলিম হজম করতে পারবেনা। আমি যে ভাষায় কথা বলি, আমার দরকার ঠিক সেরকম সাধারন ভাষার কোন জিনিষ। আমি এমন কাউকে খুজে বের করার চেষ্টা করেছি যে আমাকে কুর’আন শিখাতে পারে, আমি পাইনি। আমি আল্লাহর কাছে একটি দু’আ করেছিলাম। আমি তাঁকে বলেছিলাম-

“My Lord . I love you more than myself and my soul. You are my creator and to you is my final return. I love your book. I pray to you that you teach me your book. Please give me the light and power of this divine revelation so that I can learn it and I can spread your words. ”

কেউ ডাকলে আল্লাহ্‌ সাড়া দেন। আমি আল্লাহর দিকে এক পা এগুনোর চেষ্টা করেছিলাম, আল্লাহ্‌ নিজে আমাকে পথ দেখিয়ে সামনে নিয়ে গেছেন। আমাকে আরবি ভাষার ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর সেরা মানের শিক্ষক, বই, স্কলারদের সাথে । আমাকে সঠিক মানুষ ও সঠিক রাস্তাগুলো দেখিয়ে দিয়েছেন। কুর’আন সম্পর্কে আমার জ্ঞান শুন্য। তারপরো আমি দেখে যাচ্ছি আল্লাহ্‌ কিভাবে আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। আমি শুধু তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম- আমি শিখতে চাই। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন।

একধরনের ক্ষোভ নিয়ে আমি আর্টিকেল লেখি। আমাদেরকে বোরিং, আনন্দহীন উপায়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে ধর্ম শিখানো হয়, তারপরে ভ্রান্ত নানা পথে হোচঁট খেতে খেতে আমরা সেক্যুলার ধর্মহীন জীবন- পুজারীতে পরিনত হই। আমি সেদিনও একজন মহিলার মুখে বলতে শুনেছি- “এইসব কুর’আন হাদিস আমাদের জন্য না। এগুলা আলেমরা পড়বে, আমরা খালি তাদের কথা শুনব।” অথচ আমরাই নাকি সেই সৌভাগ্যবান ১.৫ বিলিয়ন মানুষ যারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার সূযোগ পেয়েছি। আমি চাই আপনি কুর’আন কে শিখুন ও হৃদয়ে ধারন করুন। ফল মূল লতা পাতায় আল্লাহর নাম খোঁজার চেয়ে আসুন আমরা কুর’আনকে নিয়ে নতুন করে অভিভূত হই। মুসলিমদের পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড়ো কারন হল, তারা কুর’আন কে এপ্রিশিয়েট করছে না। তারা কুর’আন নিয়ে কথা বলেনা, কুর’আন নিয়ে আবেগ দেখায় না, কুর’আন নিয়ে চিন্তা করেনা। এই বইটি কোন সাধারন বই নয়, অসাধারন বইও নয়। সাধারন-অসাধারন এই কথাগুলো সৃষ্টিজগতের জন্য প্রযোজ্য। কুর’আন সৃষ্টিজগতের ঊর্ধে একটি বই।

এই আর্টিকেল এর অনেক কিছুই আমি প্রথমবারের মতন জেনেছি। একদিন গভীর রাতে একা একা আমি যখন বিষয়গুলো পড়ছি, আমি আবিষ্কার করলাম আমি বিস্মিত হবার সীমা পার হয়ে গেছি। অনির্দিষ্টকাল আমার চেয়ারে বসে থেকে আমি অনুভব করলাম, ভয়ঙ্কর বিচিত্র একটা অনূভুতি আমার হচ্ছে। এটা অনেকটা এমন যে, আপনি ঘরে একা একা, কিন্তু আপনার মনে হচ্ছে কেউ একজন আপনার দিকে একদৃষ্টিতে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে আমি আমার পিছনের টেবিলের উপরে রাখা কুর’আন টার দিকে তাকিয়েছিলাম। জীবনে প্রথমবারের মত আমি অনুভব করেছি, যেন এটি কোন জড় পদার্থ নয়, এটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আপনি যদি এখানে দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই করে দেখতে চান, এই রেফারেন্সগুলো দেখতে পারেন।

১- কুর’আনের অনুবাদ- হাফেয মুনির উদ্দিন আহমেদ, আল কুর’আন একাডেমী, লন্ডন
২- Testing the Mathematical Miracles in the Quran Youtube – 1 of 2
৩- Testing the Mathematical Miracles in the Quran Youtube – 2 of 2
৪- Quran Miracles Mathematics

অলৌকিক কুর’আন ৩য় পর্ব- আল্লাহ যখন কৃতজ্ঞতা শিখান

আমি মাঝে মাঝে যখন কোন মুসলিমকে জিজ্ঞেস করি – “ভাই কেমন আছ? ভাল আছো ?” প্রায়ই এরকম উত্তর আমি শুনি-

– (মুখচোখ বিরস করে) এইতো ভাই, চলতেসে কোনরকম আরকি।
– (একজনের বাচ্চা অসুস্থ) ভাল নাই ভাই। ভাল আর থাকি কেমনে বলেন। ভাল থাকার মতন কি কোন অবস্থা আছে?
– (একজন ছাত্র) ভাল নাই ভাই, অবস্থা খুব খারাপ। ক্লাস আর এসাইনমেন্টের চাপে পাগল হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে মরে যাই।

একটি বিশেষ কারনে আমরা মুসলিমরা কমপ্লেইন করা থেকে বিরত থাকতে পারিনা। সেই কারনটাই এই আর্টিকেল লেখার মূল কারন। এই আর্টিকেল এ কুর’আন এর প্রথম সূরার প্রথম শব্দটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে আরবি সাহিত্যে ও গ্রামার এর উপর ভিত্তি করে।আমরা মুসলিম, কাজেই এই শব্দটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে জড়িত, প্রতিদিন আমরা এই শব্দটি ব্যবহার করি । কিন্তু তারপরও আল্লাহর কথার অনেক অনেক কিছু আছে যা আমরা জানিনা, যা জানলে আমরা কুরআনকে আরো গভীরভাবে অনুভব করতে পারতাম। আমি চেষ্টা করেছি যাতে আপনি আগের চেয়ে ১% বেশি হলেও আলহামদুলিল্লাহ- কে উপলব্ধি করতে পারেন। এই আর্টিকেল এর কোন মৌলিক কৃতিত্ব আমার নয়, বিভিন্ন লেকচার ও আমাদের বাস্তব জীবনের উদাহরণগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।

কুর’আন এখন আমরা যেভাবে বই আকারে পড়ি, এটা সেভাবে নাযিল হয়নি। ২৩ বছর ধরে আস্তে আস্তে এর আয়াতগুলো আল্লাহ্‌ পাঠিয়েছিলেন। প্রথম যেই সূরাটি পুরোটা একবারে নাযিল হয়, সেটা ছিল সূরা ফাতিহা। আপনার আমার প্রত্যেকের একটা আলাদা আলাদা পরিচয় আছে। আল্লাহর পরিচয় হচ্ছে সূরা ফাতিহা। আর আল্লাহ্‌ যেভাবে যে স্টাইলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন, সেভাবে আর কারোর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।

১. “আলহামদুলিল্লাহ” অর্থ আসলে কি ?

আমি এটার মোটামুটি একটা অনুবাদ দিচ্ছি যেটা আমরা সবসময় পড়ি-

“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য- All praises belongs to Allah ”

এটি এক শব্দের একটি বাক্য। ভেঙ্গে বললে এমন দাঁড়ায় – Al-Hamd Li Allah .
আল্লাহ্‌ এখানে একটি বিশেষ শব্দ ব্যবহার করেছেন। শব্দটি হচ্ছে “হাম্‌দ” . হাম্‌দ শব্দটি আল্লাহ্‌ যেভাবে ব্যবহার করেছেন সেভাবে প্রচলিত আরবি গ্রামারে কখনো ব্যবহৃত হয়না।

প্রশংসাকে আরবিতে বলা হয় – “মাদ্‌হ” ও “সানা” ।
ধন্যবাদকে আরবিতে বলা হয়- “শুকর”

প্রশংসা আর ধন্যবাদ কি এক জিনিস ? না, এই দুইটি একই জিনিস না। এই দুইটি একদম আলাদা দুটি অনূভুতি। কাজেই “আলহামদুলিল্লাহ” বুঝতে হলে এই দুইটি জিনিস আমাদেরকে আলাদা করে বুঝতে হবে। একটি হল “ধন্যবাদ” ও আরেকটি হল “প্রশংসা” . জীবনে কখনো আমরা ধন্যবাদ দেই, কিন্তু প্রশংসা করি না। আবার কখনো আমরা প্রশংসা করি, কিন্তু ধন্যবাদ/কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনা।

অনেক কিছু আছে যেগুলোকে আমরা প্রশংসা করি, কিন্তু সেগুলোকে আমরা কখনোই ধন্যবাদ দেই না। লিওনেল মেসি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। ফুটবল খেলাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে এই মানুষটি। আমরা সবসময় মেসির খেলার “প্রশংসা” করি, কিন্তু আমরা কখনোই তাকে “ধন্যবাদ” জানাই না! আমরা কখনই বলি না যে, “মেসি তুমি কালকে হ্যাটট্রিক করেছ, তোমার প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ, তোমাকে হাজার হাজার ধন্যবাদ !” আপনি একটা দামি গাড়ির প্রশংসা করবেন, আপনি আইফেল টাওয়ার এর ডিজাইন এর প্রশংসা করবেন, আপনি একটা আইফোন ৫ এর প্রশংসা করবেন, কিন্তু আপনি কখনোই এই জিনিসগুলোকে ধন্যবাদ দিবেন না। আপনি একটা দামী মার্সিডিজ গাড়ি দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে পারেন, কিন্তু আপনি কখনই সেটার গায়ে হাত বুলিয়ে বলবেন না- ‘ হে মার্সিডিজ তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ !! ‘ . এই ধরনের প্রশংসাকে আরবিতে “শুকর” বলা হয়।

বিপরীত জিনিসটাও ঘটে। আমরা বহু মানুষকে ধন্যবাদ দেই বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, কিন্তু আমরা তাদের প্রশংসা করিনা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন একটি শব্দ হল- ধন্যবাদ/থ্যাঙ্কস । ধরুন হাই-ওয়েতে আপনার গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গিয়েছে, আপনি একা সেটা ঠিক করতে পারছেন না। একজন সহৃদয় ভদ্রলোক তাঁর গাড়ি থামিয়ে নেমে এসে বাড়তি চাকাটা লাগাতে আপনাকে সাহায্য করলেন। আপনি স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন ও তাঁকে ধন্যবাদ দিবেন। কিন্তু আপনি তাঁর প্রশংসা করবেন না। আপনি তাঁকে বলবেন না-” ভাই আমার! আপনি কি চমৎকার করেই না চাকা পাল্টাতে পারেন ! আপনার মতন এত দ্রুত চাকা পাল্টাতে আমি আর কাউকে দেখিনি !”

আরো একটা উদাহরন দেই। কুর’আনে সবচেয়ে বেশিবার যে নবীর কথা বলা হয়েছে(৭০ বার) তিনি হলেন নবী ইবরাহীম(আ) . তাঁর বাবা যে শুধু মুশরিক মূর্তিপূজারী ছিলেন শুধু তাই না, তিনি মূর্তি বানিয়ে বানিয়ে পাইকারী বিতরন করতেন ! আর এই মানুষের সন্তান ছিলেন ইবরাহীম(আ) !! স্বাভাবিকভাবেই বাবার এই ঘৃন্য কাজকে প্রশংসা করার মতন কিছু নেই। কিন্তু তারপরো ইবরাহীম (আ) তাঁর বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে বাধ্য ছিলেন। কারন আল্লাহ্‌ আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যেকোন অবস্থায় মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বলেছেন-

“ANISH KURLI WALI WALIDAIKA”- Be Grateful to Me, and to Both of your parents.

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বলেননি- “আমার প্রশংসা কর, তারপর তোমার বাবা-মায়ের।” আল্লাহ্‌ আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে আদেশ দিয়েছেন। এটা কোন অনুরোধ নয়, এটা আদেশ। আপনার বাবা-মা যদি কাফির বা মূর্তিপূজারীও হয় এবং তারা আপনাকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার জন্য জোর-ও করে, তারপরেও আপনি তাদের প্রতি ভাল আচরন করতে বাধ্য। আপনি কখনই তাদের শির্কের প্রশংসা করবেননা, কিন্তু আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে বাধ্য কারন তারা আপনার মা-বাবা, তারা আপনাকে লালন পালন করেছেন।

যখন আমরা মুসলিমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি, তখন আমরা আল্লাহকে মন থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ঠিক “এই” মূহুর্তে তিনি যা করছেন আমাদের জন্য , তাঁর জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি যে আমাদেরকে প্রতি সেকেন্ডে ভালবাসা ও দয়া দেখিয়ে যাচ্ছেন, সেজন্যে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ/কৃতজ্ঞতা জানাই। আল্লাহ্‌ হচ্ছেন নিখুঁত, তাঁর সিদ্ধান্ত ও কাজ শতভাগ নিখুঁত, এজন্য আমরা তাঁর প্রশংসা করি। আর । তিনি যেটাই করেন, সেটা হচ্ছে পারফেক্ট, সেটা এরচে ভালো কোনভাবেই হতে পারেনা, এজন্য ধন্যবাদের সাথে সাথে আমরা তাঁর প্রশংসা করি। কাজেই আলহামদুলিল্লাহ হচ্ছে দুইটি জিনিস, এবং একসাথে একই সময়ে এই দুটো জিনিস-

১- আল্লাহর প্রতি প্রশংসা জানানো ( Praise is for Allah)
২- আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো ( Thanks is for Allah)

প্রচলিত অনুবাদে লেখা থাকে “আলহামদুলিল্লাহ= সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য” . যদি আল্লাহ্‌ বলতেন “আল-মাদ্‌হু-লিল্লাহ” , তাহলে এই অনুবাদটা ঠিক ছিল। কিন্তু আল্লাহ্‌ সেটা বলেননি, কাজেই এই অনুবাদটা আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থটাই ঠিকমত তুলে ধরতে পারেনা, ভাব তো পরের কথা।

আমি আলহামদুলিল্লাহ শব্দের শুদ্ধতর আরেকটা অনুবাদ দিচ্ছি-
Alhamdulillah= All Praises and Thanks/Gratitude belong to Allah.

যেহেতু ধন্যবাদকে আরবিতে বলা হয় “শুক্‌র” আর প্রশংসাকে আরবিতে বলা হয় “মাদ্‌হ”, কাজেই আলহামদুলিল্লাহ না বলে অর্থ অপরিবর্তিত রেখে কি আমরা এটাকে অন্যভাবে বলতে পারি না ? –

” আল-মাদ্‌হু ওয়া শুক্‌রু লিল্লাহ” – (All Praises and Thanks/Gratitude belong to Allah)

যদি দুইভাবে বললেই একই অর্থ হয় তাহলে কি আমরা আলহামদুলিল্লাহকে অন্যভাবে বলতে পারি না?? না, আমরা পারি না। অনুবাদ একই শোনালেও দুইভাবে বলার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, যদি আমরা বুঝতে পারি।

” আল-মাদ্‌হু ওয়া শুক্‌রু লিল্লাহ” শুনলে মনে হতে পারে, মাঝে মাঝে আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি, আবার মাঝে মাঝে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু না, সেটা কখনোই না। আমরা একই সাথে, একই মূহুর্তে তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আর এক শব্দে এই দুটি অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য “হাম্‌দ” এর চেয়ে উন্নত কোন শব্দ হতে পারে না !!!

২. বিশেষ্য নাকি ক্রিয়া? – Noun or Verb?

আরবিতে “আহ্‌মাদু” মানে হচ্ছে- আমি প্রশংসা করছি। যদি আল্লাহ্‌ কুর’আন শুরু করতেন “আহ্‌মাদুল্লাহ” (আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি) দিয়ে, তাহলে কি কোন সমস্যা ছিল? আমরা তো আল্লাহর প্রশংসা করিই, তাইনা?

সমস্যা ছিল। আহ্‌মাদুল্লাহ একটি ক্রিয়াপদ বা Verb. আর প্রত্যেকটি ক্রিয়াপদের একটি নির্দিষ্ট “সময়কাল ( Tense) ” থাকা আবশ্যক। যখন আমি বলি আহ্‌মাদুল্লাহ, তার মানে আমি ঠিক এই মূহুর্তে এই সময়ে (Right now) আল্লাহর প্রশংসা করছি (present tense) . কিন্তু অন্যসময় আমি তাঁর প্রশংসা নাও করতে পারি ! Verbs are TEMPORARY.

আলহামদুলিল্লাহ একটি বিশেষ্য বা Noun. বিশেষ্য জাতীয় শব্দের কোন Tense নাই। আপনি যদি বলেন – “গোলাপ সবচেয়ে সুন্দর” , আপনি বুঝান না যে গোলাপ আজকে সুন্দর, বা আগামীকাল সুন্দর হবে, বা গতকালকে সুন্দর ছিল। গোলাপ সবসময়েই সুন্দর। আপনি ঘুরিয়েও বলতে পারেন- সব সৌন্দর্য গোলাপের ! Nouns are TIMELESS and PERMANENT.

যখন আল্লাহ্‌ বলেন “আলহামদুলিল্লাহ”, তার মানে হচ্ছে- Praise is Allah’s . আল্লাহ্‌ এখানে কোন সময়কাল নির্ধারন করে দেন নাই, এখানে কোন Tense নেই। আল্লাহ্‌ হচ্ছেন অমুখাপেক্ষী- আস সামাদ। সকল প্রশংসা ইতিমধ্যেই তাঁর, সকল প্রশংসার মালিক ইতিমধ্যেই তিনি। আমরা সারাজীবন ধরে তাঁর প্রশংসা করলেও তাঁর প্রশংসা একবিন্দু বাড়বে না, পৃথিবীর একটি মানুষও আজীবন একবারও আল্লাহর প্রশংসা না করলেও তাঁর প্রশংসা বিন্দুমাত্র কমবে না। আমাদেরকে আল্লাহর কোন দরকার নেই, আমাদের প্রশংসার আল্লাহর কোন দরকার নেই, তারপরো তিনি আমাদেরকে সম্মান দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন যাতে আমরা তাঁর প্রশংসা করতে পারি। আল্লাহ্‌ স্থায়ী, তাঁর প্রশংসাও স্থায়ী। তাই হাম্‌দ শব্দটি একটি বিশেষ্য। আল্লাহ্‌ কতটা অমুখাপেক্ষী সেটার একটা নমুনা আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এই হাদিসে দিয়েছেন-

” হে আমার বান্দারা ! যদি তোমাদের মানুষ ও জীনদের প্রথমজন থেকে শুরু করে শেষজন ( পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকে) একটি সমতল ভূমিতে একসাথে দাঁড়ায়, আর তারা প্রত্যেকে তাদের যা ইচ্ছা তা আমার কাছে চায়, আর আমি যদি যে যা চায় তা তাকে দিয়ে দিতাম, তাহলে একটা সুঁইকে সমুদ্রে ডুবিয়ে তুলে আনলে তার মাথায় সমুদ্রের যতটুকু পানি লেগে থাকে, আমার রাজত্ব সেই সামান্য পরিমানও কমত না । (মুসলিম) ”

আল্লাহ্‌ যা কিছু করেন, সবকিছুই প্রশংসা ও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহ্‌ হচ্ছেন নিখুঁত। ত্রুটি, ভুল, অন্যায়, অবিচার, প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদি যাবতীয় নিচু মানের বৈশিষ্ট্য থেকে তিনি মুক্ত। এগুলো সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য, স্রষ্টার নয়। আলহামদুলিল্লাহ শব্দের সবচেয়ে বড় ভাবার্থ হচ্ছে এটাই। একজন মুসলিম আল্লাহর যেকোন কাজের জন্য, প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের জন্য আল্লাহকে বলে- ” সব প্রশংসা কেবল আপনার আল্লাহ্‌। আর আপনি যা করলেন, আপনি যেভাবে করলেন, সেটার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। যেহেতু আপনি এটা করেছেন, কাজেই এটাই আমার জন্য বেস্ট। থ্যাঙ্ক ইউ আল্লাহ্‌। আলহামদুলিল্লাহ”।

এই একটি শব্দ আপনার জীবন পালটে দেওয়ার জন্য একাই যথেষ্ট। শুধুমাত্র এই একটি শব্দ। এটি কুর’আনের সূচনা, প্রথম শব্দ মাত্র। অথচ কুর’আনের ভেতরেই এখনো আপনি ঢুকেন নাই, পুরো বইটাই বাকি আছে! যেভাবে আল্লাহ্‌ কুর’আনের সূচনা করেছেন, তার কোন তুলনা হয়না। আল্লাহ্‌ নিজের নাম আগে রেখে বলতে পারতেন- “লিল্লাহিল হাম্‌দ” , অর্থ একই দাঁড়াত। কিন্তু আল্লাহ্‌ চেয়েছেন আমরা যেন আগে শুধু “হাম্‌দ” শব্দটি নিয়ে চিন্তা করি, আমরা যেন বুঝতে পারি কত অপরিসীম মহান এক সত্ত্বার কথা আমরা পড়তে যাচ্ছি এখন। মানুষকে কৃতজ্ঞতা শেখানোর জন্য আল্লাহর প্রথম শব্দটি হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। আমরা যদি কৃতজ্ঞ হতে না পারি, আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে না পারি, আমরা কোনদিনও আল্লাহর কথাগুলোকে ও আল্লাহকে এপ্রিশিয়েট করতে পারবনা। একজন বিশ্বাসী হতে হলে আপনার মধ্যে প্রথম যেই জিনিসটা লাগবে সেটা হচ্ছে হাম্‌দ, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ না হতে পারলে আপনি কুর’আনের বাকি গাইড্যান্স এর কথা ভুলে যান, কারন সেগুলো আপনার তেমন কোন কাজে আসবে না। আপনার জীবন কেটে যাবে কমপ্লেইন করে করে।

পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ নাস্তিক( Atheist) আছে যারা স্রষ্টা আছেন কিনা এটা নিয়েই নিশ্চিত না। এমনকি কোটি কোটি মুসলিম আছে যারা তাদের জীবন নিয়ে হতাশ। আপনি আপনার চারপাশেই এমন মুসলিম দেখতে পারবেন। তাদের কমন কমপ্লেইনগুলো হল অনেকটা এরকম।

– “আল্লাহ্‌ কেন আমার সাথেই এমন করলেন? আমার জীবনে কেন এরকম হল? আমি এটা ডিজার্ভ করিনা। এটা আমার সাথে অবিচার। লাইফ ইজ সো আনফেয়ার। ”

– ” আমি ভাল নেই। ভাল থাকার মতন কিছু নেই আমার জীবনে। ওরা তো আমার চেয়ে অনেক ভাল আছে ।”

– আমার চাকরিটা ভাল না। অমুক কত ভাল একটা চাকরি করে। আমি এতো কম বেতন পাই কেন? ”

এদের সবার সমস্যা একটাই। এরা কেউ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারছেনা। এরা কেউ আল্লাহকেই এপ্রিশিয়েট করতে পারছেনা, নিজের জীবন তো দূরের কথা। এরা সবাই কোন না কোন ভাবে হতাশ, ডিপ্রেস্‌ড। “আলহামদুলিল্লাহ” একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় ডিপ্রেশনের ঔষধ। একজন মুসলিম কখনো হতাশ হতে পারেনা। ইসলামে হতাশ হওয়ার মতন কিছুই নেই। একজন মুসলিম জানে যে, আল্লাহ্‌ প্রতি মূহুর্তে তাকে দেখেশুনে রাখছেন, আল্লাহ্‌ তাঁর জন্য সেটাই করবেন যেটা তার জন্য সবচেয়ে ভাল। আমি বলিনি যে – একজন মুসলিম “বিশ্বাস” করে। আমি বলেছি, একজন মুসলিম “জানে” । He doesn’t only believe, he knows…without any doubt.

৩. কেন আলহামদু-লি- “আল্লাহ্‌” ??

আলহামদুলিল্লাহ শব্দটিতে আল্লাহ্‌ প্রথমে আমাদেরকে হাম্‌দ অংশটি বুঝিয়েছেন। তারপর তিনি বলেছেন- হাম্‌দ হচ্ছে আল্লাহর জন্য- আলহামদু-লি-আল্লাহ ( আরবিতে লি = জন্য, For ) । আল্লাহর আরো অনেক নাম আছে। আমি কয়েকটা বলছি। আর-রাহমান, আর-রাহীম, আল-মালিক, আল-কুদ্দুস…ইত্যাদি। যদি সবগুলোই আল্লাহর নাম হয়, আল্লাহ্‌ কেন বললেন না- আলহামদু-লিল-মালিক ? বা আলহামদু-লির-রাহমান ??

আর- রাহমান মানে অকল্পনীয় দয়ালু। আল-মালিক মানে প্রভু। কুর’আনের প্রথম শব্দটি যদি আলহামদুলিল্লাহ না হয়ে হত আলহামদু-লির-রাহমান, তাহলে আমরা প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানাতাম আল্লাহর একটিমাত্র গুনবাচক নামকে এবং এটার অনুবাদ হত- ” Praise and Thanks is for the Unimaginably Merciful”.

কিন্তু আমরা শুধুমাত্র আল্লাহকে তাঁর দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই না। বরং আল্লাহর যা কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা জানি, আর যা কিছু আমাদের জানার বাইরে, সবকিছুর জন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাই আমাদের এমন একটা শব্দ দরকার যেটা আল্লাহর সব বৈশিষ্ট্যগুলোকে একসাথে তুলে ধরবে। আর সেই একমাত্র শব্দটি হচ্ছে- আল্লাহ্‌ । তাই আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শিখিয়েছেন- আল হামদু লি আল্লাহ্‌ ।

আপনাকে মনে রাখতে হবে যে “শুক্‌র(কৃতজ্ঞতা)” আর “সব্‌র(ধৈর্য্য)” এই দুটি জিনিশ আপনাকে এক সাথে করতে হবে। আপনি যদি শুধু ধৈর্য্য ধারন করেন কিন্তু কৃতজ্ঞ হতে না পারেন, আপনি কখনোই মানসিক শান্তি পাবেন না। আপনার জীবনে ছোট মাঝারি বড় সমস্যা আসবেই, এটাই জীবন। জীবনে সমস্যা আসলে আমরা সবাই যেটা করি সেটা হল, আমরা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলি, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে ফেলি। যদিও বা আমরা ধৈর্য্য ধরি, কয়জন আছি আমরা যারা সমস্যাটার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হই?
আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করতেই পারেন, এটা আমি কি বললাম? সমস্যার জন্য কেন আমরা কৃতজ্ঞ হব? হ্যা, এটাই হচ্ছে সমাধান। কারন আপনি আপনার সমস্যা নিয়ে ভাবেন, আপনি এটা ভাবেন না যে কত হাজার হাজার সমস্যা থেকে আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করে চলেছেন প্রতি সেকেন্ডে। “আপনার” সমস্যাটা আরো অনেক অনেক খারাপ হতে পারত। আপনার চেয়ে অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে ঠিক এই মূহুর্তে এই সময়ে আরো কোটি কোটি মানুষ আছে। আপনি যেহেতু এই লেখা পড়তে পারছেন তারমানে আপনার কাছে এটা পড়ার মতন প্রযুক্তি আর ইন্টারনেট আছে। আপনি লিখে রাখেন যে আপনি খুব ভাগ্যবান মানুষদের একজন। এই মূহুর্তে অনেক অনেক মানুষ এক বেলা খাবার আর থাকার জন্য একটু আশ্রয় খুঁজছে। এই মূহুর্তে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, আপনি তাদের মধ্যে একজন না। আল্লাহ আপনাকে এক একটা সমস্যা দেন আপনার একটা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। আপনি যদি সমস্যাটার জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহকে বলতে পারেন – “আল্লাহ আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে আপনি আমাকে এত ছোট একটা পরীক্ষা দিয়েছেন। এখন আপনি-ই এর সমাধান করে দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক, একমাত্র আপনিই আমার প্রভু ও রক্ষাকর্তা( ওয়ালী)” . আপনি যদি এটা একবার বলতে পারেন, তাহলেই আপনি দেখবেন ধৈর্য্য ধরা কোন ব্যাপার-ই না।

আমরা এমন একটা সমাজে বড় হই, যেখানে জন্ম পর থেকেই শ্বাস নেওয়ার পাশাপাশি আরেকটা সহজাত অভ্যাস আমরা রপ্ত করি- “কমপ্লেইন করা” . আমাদের বাবা-মা রা তাদের বন্ধুদের চায়ের দাওয়াতে বাসায় নিয়ে আসেন, তারপর শুরু হয় তাদের কমপ্লেইন করা। আমাদের প্রিয় টপিক হল “দেশ কত খারাপ” . দেশ বসবাসের অযোগ্য একটা জায়গা, এখানে বাস করার কোন মানেই হয় না, এখানে কোন নিরাপত্তা নেই, রাজনৈতিক দলগুলো কত খারাপ, দেশে কত দুর্নীতি, খাবারে ভেজাল ও কেমিক্যাল, গ্যাস কারেন্ট পানির সমস্যা, ইত্যাদি হেন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে আমরা কমপ্লেইন শুনিনা বা করিনা। যখন গরম পড়ে তখন আমরা গরম নিয়ে কমপ্লেইন করি, যখন বৃষ্টি হয় তখনো আমরা কমপ্লেইন করি যে রাস্তাঘাটে পানি উঠে গেছে, চারদিকে প্যাচপ্যাচে কাদা। আমাদের সংবাদপত্রগুলো এক একটি ফিতনা-পত্র আর কমপ্লেইন-পত্র ছাড়া আর কিছুই না। সব কিছু মিলিয়ে হতাশ হতে হতে আপনার একদিন হয়ত মনে হবে- “এর মধ্যে আমি বেঁচে থাকব কিভাবে?”

এর মধ্যেই আপনি বেঁচে থাকবেন। কারন আপনাকে চালানোর কাজ আপনি করেন না, করেন আল্লাহ। আপনার সমস্যার জন্য আপনি নিজেই দায়ী। আল্লাহ আপনাকে সমাধান ও Guidance দিয়েই দিয়েছেন যেটা প্রয়োগ করে আপনি শান্তির একটা জীবন কাটাতে পারছেন না। আপনি শুধু মন থেকে কৃতজ্ঞ হন, এটাই সমাধান। অনেকেই আমরা আছি যারা আলহামদুলিল্লাহ শব্দটা মুখে উচ্চারন করি, তারপর শুরু করি আমাদের কমপ্লেইনগুলো !!

– হ্যা ভাই,আলহামদুলিল্লাহ, আছি আরকি কোনরকম । কি প্রচন্ড গরম পড়েছে দেখেছেন? একদম জঘন্য অবস্থা। এইবার ঠিকমত বৃষ্টি হয়নাই, আরো বেশি বৃষ্টি দরকার। ভাবসিলাম ফল কিনব কয়েকটা, যেই ফরমালিন ভাই, ফল কিনার চেয়ে বিষ কিনা ভাল। দেশের অবস্থা দেখসেন ভাই? চরম খারাপ। সব চোর বাটপারের দেশ রে ভাই। এই দেশের কিছু হবেনা আগামি ৫০ বছরেও…(চলতে থাকবে) ।

আমরা মুসলিমরা আলহামদুলিল্লাহর মানুষ, We are the people of Alhamdulillah. পৃথিবীতে আরো অনেক ধর্মের মানুষ আছে। একটি জিনিস কোন ধর্মে নেই একমাত্র ইসলাম বাদে। সেটি হল আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে নিজের মনকে উজাড় করে একটিমাত্র শব্দ ব্যবহার করে স্রষ্টার প্রতি ধন্যবাদ, প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা, আন্তরিকতা, আবেগ, আনুগত্য প্রকাশ করার সৌভাগ্য আল্লাহ্‌ একমাত্র আমাদের মুসলিমদেরকেই দিয়েছেন। এরপর আপনি চিন্তা করে দেখুন আপনি কতটা সম্মানিত ও সৌভাগ্যবান একজন মানুষ। মুসলিমরা সারাক্ষন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে, মুসলিমরা সারাক্ষন পজিটিভ চিন্তা করে। আমরা যদি সত্যি সত্যিই আলহামদুলিল্লাহ উপলব্ধি করতাম ,আমরা কখনো ডিপ্রেস্‌ড হতাম না, আমরা কখনো আমাদের জীবন নিয়ে কমপ্লেইন করতাম না। আমাদের সমস্যাগুলো আল্লাহর দয়া, ভালবাসা ও নিয়ামতের চেয়ে কখনোই বেশি না।

একটি ঘটনা দিয়ে আমি আর্টিকেলটা শেষ করব। সেদিন এপ্রিলের ২৫ তারিখ শুক্রবার ছিল। তারিখটা আমার মনে আছে, কারন আমার জীবনের বিশেষ দিনগুলো আমার মনে থাকে। পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে ঢাকায় ভয়াবহ গরম পড়েছিল, দিনের পর দিন বৃষ্টি হয়না, প্রায় প্রতিদিন তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যেত। মানুষ গরমে সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। ফেসবুকে মানুষের এ জাতীয় স্ট্যাটাসও দেখলাম যে আমাদের উপর নাকি আল্লাহর গজব পড়েছে । শুক্রবার জুম্মাহর নামাজে ইমাম বললেন উনারা ছোটবেলায় খরা হলে দল বেঁধে বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তেন। এমনও কখনো হয়েছে যে বাসায় ফিরতে ফিরতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।

আমার কাছে একটা দু’আর বই আছে ‘হিসনুল মুসলিম’ নামে। সেখানে একটা বৃষ্টির দু’আ আছে – “আল্লাহুম্মা আগীসনা, আল্লাহুম্মা আগীসনা, আল্লাহুম্মা আগীসনা”. সেদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত আমি অনেকবার দু’আ টা পড়েছিলাম। আমি আল্লাহকে এটাও বলেছি- “আল্লাহ্‌ আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। গরম নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। আপনি যাই করেন সেটাই হচ্ছে নিঁখুত। কিন্তু আমি একজন ক্ষুদ্র ও দূর্বল মানুষ। গরমে আমি কষ্ট পাচ্ছি ও অন্যান্যরাও কষ্ট পাচ্ছে। আমি আপনার কাছে বৃষ্টি চাই। আমাকে বৃষ্টি দিলে আপনার কিছু হবেনা, কিন্তু আমার অনেক উপকার হবে।”

আমি আল্লাহকে দেখতে পাইনা, কিন্তু আমি জানি তিনি আমাকে প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ করেন। আমি জানি আমার প্রতিটি কথা তিনি শুনেন। পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের মধ্যে আমার জন্য তাঁর কাছে একান্ত আলাদা সময় আছে। আমার দু’আর উত্তর দিলেন আল্লাহ্‌ ঠিক একদিনের মধ্যে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে সারা ঢাকায় বৃষ্টি শুরু হল। হয়ত এটা খুবই সাধারন একটা ঘটনা, হয়ত সেদিন এমনিই বৃষ্টি হত। আমি সেটা নিয়ে কেয়ার করিনা । আমি নিজের চোখে দেখেছি দু’আ করলে আল্লাহ্‌ উত্তর দেন। গরমে আমার কষ্ট হচ্ছিল, আমার বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল, আমি আল্লাহর কাছে চেয়েছি, আল্লাহ্‌ আমাকে সেটা দিয়েছেন। আমি শুধু তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম।

একজন মুসলিম হাঁচি দিয়েও আল্লাহকে ধন্যবাদ দেয়। খাওয়া পরা ঘুমানো টয়লেট করা সহ পৃথিবীর যাবতীয় হালাল কাজের জন্য একজন মুসলিম আল্লাহকে স্মরন করে তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে নেয়। একজন মুসলিমের জীবনের সারমর্ম হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

আপনি যদি এই আর্টিকেল এর প্রত্যেকটি কথাও ভুলে যান, খালি নিচের কয়েকটি কথা মনে রাখুন ও আপনার জীবনে প্রয়োগ করুন। ফলাফল আপনি নিজের চোখেই দেখতেই পারবেন।

১- এই আর্টিকেল পড়ার পর থেকে ঠিক আগামী ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত আপনি পৃথিবীর একটা বিষয় নিয়েও কমপ্লেইন করবেন না। অন্য কারোর কাছে করবেন না, এমনকি নিজের কাছেও করবেন না। আপনি কতটা কৃতজ্ঞ হতে পারেন এটা হবে সেটার প্রথম এসাইনমেন্ট। ইচ্ছা হলে আপনি একটা সাদা কাগজে লিখে আপনার ঘরে টানিয়ে রাখতে পারেন- I will not complain about anything today.

[] যদি কারেন্ট চলে যায়, আপনি বলবেন- “আলহামদুলিল্লাহ, মাত্র ৫ বার কারেন্ট গিয়েছে, ১০ বার তো যায়নি।”

[] যদি গোসলের পানি না থাকে, আপনি বলবেন- “আলহামদুলিল্লাহ, খাওয়ার পানি তো আছে।”

[] যদি প্রচন্ড গরম পড়ে, আপনি বলবেন- “আলহামদুলিল্লাহ, গরম পড়েছে। কিন্তু দূর্ভিক্ষ ক্ষরা মহামারী কিছুই হয়নি ”

[] আপনার জীবনে আগামী ২৪ ঘন্টায় ভাল-মন্দ যেটাই ঘটবে আপনি সেটার জন্যই মন খুলে আল্লাহর প্রশংসা করবেন। যদি আপনার হাত কেটে যায়, আপনি আল্লাহর প্রশংসা করবেন, কারন আপনার হাত এখনো আস্ত আছে, সেটা ভেঙ্গে যায়নি।

আপনি যদি ২৪ ঘন্টা এভাবে পার করতে পারেন, আপনি এরপর টার্গেট করবেন আগামী এক সপ্তাহ আপনি একটি কমপ্লেইনও করবেন না। এভাবে আপনি নিজের কৃতজ্ঞতাকে বাড়াতে থাকবেন আস্তে আস্তে। আপনি নিজেই দেখতে পারবেন আপনি কোথায় পৌঁছে যান।

২- আপনি একটা সাদা কাগজ নিবেন। সেটাতে আপনি হেডিং দিবেন “Things for whose I will Thank Allah” . সেটাতে আপনি একটা একটা করে লেখা শুরু করবেন আল্লাহ্‌ আপনাকে আজ পর্যন্ত কি কি জিনিস দিয়েছেন। লেখা শেষ হলে সেই কাগজটা একবার পড়ে নিয়ে পাশে রেখে আপনি ২ রাকাত নামাজ পড়বেন ঘুমানোর আগে। সেই নামাজে আপনি প্রত্যেকটি জিনিসের জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাবেন। আপনার লিস্টটা অনেকটা এমন হতে পারেঃ My life, For making me Human & Muslim, house, food, water, family, parents, education, healthy body, eyesight, 4 limbs, Internet………. |

কয়েকবছর পরের কথা। আপনার বন্ধু আপনাকে ফোন করে জিগেস করেছে “কেমন আছিস? আঙ্কেল আন্টি কেমন আছেন? ” . আপনি হেসে বললেন- ” আলহামদুলিল্লাহ খুব ভাল আছি বন্ধু। মা গতকালকে মারা গেছেন।” আপনার বন্ধু স্থম্ভিত গলায় বলল- “কিভাবে তুই ভাল আছিস?” আপনি তাকে বললেন- “কারন আল্লাহ্‌ যা করেন তা হচ্ছে পারফেক্ট। আর বাবা বেঁচে আছেন এখনো, আমি বেঁচে আছি এখনো, তাই আমি ভাল আছি। ”

আমি অত্যন্ত আশাবাদী। কিন্তু আমি এরকম ছিলাম না সবসময়। আল্লাহ্‌ আমার শিক্ষক। তিনি আমাকে কৃতজ্ঞতা শিখিয়েছেন। তিনি যেভাবে শিখান তার ধারেকাছেও কেউ আসতে পারেনা। আমি আপনাকে নিয়েও আশাবাদী। আপনি চেষ্টা করুন, আপনি নিশ্চয়ই পারবেন উপরের কয়েকবছর পরের “আপনার” মতন হতে।

সৌজন্যেঃ মেহেরদাদ ইউসূফ আহমেদ