ইসলামে নারী এবং ইসলাম-পূর্বে দাস-দাসীর অবস্থা

 

দাসপ্রথা ও ইসলাম                            সাদাত

এক.

ভূমিকা

দাসপ্রথা ইসলাম প্রবর্তিত কোন ব্যবস্থা নয়। আজ হতে প্রায় পৌনে ৪০০০ বছর আগের ব্যবলনিয় Code of Hammurabi-তেও দাসপ্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু কেন যেন ইসলামের সমালোচনায় দাসপ্রথা একটি বেশ মুখরোচক বিষয়বস্তুতে পরিণয় হয়, আর আলোচনার ভঙ্গিটাও এমন থাকে যাতে পাঠকের কাছে মনে হতে থাকবে দাসপ্রথার মত ঘৃণ্য একটি ব্যবস্থাকে ইসলাম জন্ম দিয়েছে বা উন্নীত করেছে। অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম দাসপ্রথার মতো একটি বর্বর প্রথার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছিল, ক্রীতদাসকে ভাতৃত্বের যে মর্যাদা দিয়েছিল, নেতৃত্বের যে সুযোগ দিয়েছিল, যে কোন নিরপেক্ষ বিশ্লেষক তার প্রশংসা না করে পারবে না।

 

দুই.

কুরআন এবং হাদিসে দাস-দাসি ও দাসপ্রথার অবস্থান

মূল আলোচনায় যাবার আগে আসুন কুরআনের কিছু আয়াত এবং কিছু হাদিস থেকে দাস-দাসি ও দাসপ্রথার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝবার চেষ্টা করি।

কুরআনের কিছু আয়াত:

আয়াত-১: দাসমুক্তকরণ ধর্মের ঘাঁটি

অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান- এতীম আত্মীয়কে অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকীনকে, অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার। [৯০:১১-১৭]

আয়াত-২: মুক্তিকামি ক্রীতদাসের জন্য সম্পদ ব্যয় করা বড় সৎকাজ

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। [২:১৭৭, প্রাসঙ্গিক অংশ]

আয়াত-৩: নিজেদের সমান হয়ে যাবার ভয়ে দাস-দাসীদের দান না করা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করার নামান্তর

আল্লাহ তা’আলা জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্টত্ব দিয়েছেন। অতএব যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে স্বীয় জীবিকা থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে। তবে কি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে। [১৬:৭১]

আয়াত-৪: নিঃস্ব হলেও সৎকর্মপরায়ণ দাস-দাসীদের বিবাহ দিয়ে দিতে হবে

তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। [২৪:৩২]

 

দাসদাসি ও দাসপ্রথা সম্পর্কিত কিছু হাদিস:

হাদিস-১: স্বাধীন ব্যক্তিকে কেনাবেচা নিষিদ্ধকরণ

আবু হুরাইরা(রা.) হতে বর্ণিত:

নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ[তায়ালা] বলেন:

আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরূদ্ধে হবো,

[১] যে আমার নামে শপথ করে অত:পর বিশ্বাসঘাতকতা করে,

[২] যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে (ক্রীতদাস হিসেবে) বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে,

[৩] যে কোন মজুরকে নিযুক্ত করে তার থেকে পরিপূর্ণ কাজ গ্রহণ করে অথচ তার পারশ্রমিক প্রদান করে না।

[সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ২২২৭; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৩, বুক ৩৪, নম্বর ৪৩০; http://sunnah.com/urn/20920]

হাদিস-২: দাস-দাসির অধিকার

আল-মা’রুর বিন সুওয়াইদ(রা.) হতে বর্ণিত:

[রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন:

তোমাদের দাসেরা তোমারদের ভাই যাদের ওপর আল্লাহ তোমাদের ক্ষমতা দিয়েছেন। কাজেই কারো নিয়ন্ত্রণে যদি তার ভাই থাকে, তবে সে যা খাবে তাকেও তাই খাওয়াবে, সে যা পরবে তাকেও তাই পরাবে। তাদের ওপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপাবে না যা তারা বহন করতে অক্ষম। যদি তা করো, তবে তাদেরকে সাহায্য কর।

[সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ২৫৪৫ (প্রাসঙ্গিক অংশ); ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৩, বুক ৪৬, নম্বর ৭২১; http://sunnah.com/bukhari/49#2]

হাদিস-৩: দাস-দাসিকে সম্মানজনকভাবে সম্বোধন করা

আবু হুরাইরা(রা.) হতে বর্ণিত:

নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমাদের কেউ যেন [এভাবে সম্বোধন করে] না বলে, ‘তোমার প্রভুকে খাওয়াও’, ‘তোমার প্র্রভুকে অযু করাও’, ‘তোমার প্রভুকে পান করাও’; বরং বলবে, ‘আমার মুনিব (সাইয়্যিদ)’ বা ‘আমার অভিভাবক (মাওলা)’। আর তোমাদের কেউ যেন না বলে ‘আমার দাস/বান্দা (আবদ)’ বা ‘আমার দাসী/বান্দী (আমাত)’; বরং বলবে ‘আমার বালিকা (ফাতাত)’ এবং ‘আমর বালক (গুলাম)’।

[সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ২৫৫২; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৩, বুক ৪৬, নম্বর ৭২৮; http://sunnah.com/urn/23920]

হাদিস-৪: দাস-দাসির ন্যায়বিচার লাভের অধিকার

সামুরাহ(রা.) হতে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি কেউ তার ক্রীতদাসকে হত্যা করে আমরা তাঁকে হত্যা করবো, আর কেউ যদি তার ক্রীতদাসের নাক কেটে দেয়, আমরাও তার নাক কেটে দেবো।

[সুনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৪৫১৫; ইংরেজি অনুবাদ: বুক ৩৯, নম্বর ৪৫০১; http://sunnah.com/abudawud/41#22]

হাদিস-৫: দাস-দাসির ওপর অপবাদ আরোপের পরিণাম

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত:

আমি আবুল ক্বসিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, কেউ যদি তার ক্রীতদাসকে অপবাদ দেয় আর সেই ক্রীতদাস যদি সে যা বলছে তা হতে মুক্ত হয়, তবে তাকে (অপবাদ আরোপকারিকে) কিয়ামতের দিনে বেত্রাঘাত করা হতে থাকবে যতক্ষণ না সেই ক্রীতদাস তাই হয় যা সে বর্ণনা করেছে।

[সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৯৪৩, ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৮, বুক ৮২, নম্বর ৮৪১; http://sunnah.com/urn/64520]

হাদিস-৬: দাস/দাসিকে চপেটাঘাত করার শাস্তি

মুআবিয়া বিন সুওয়াইদ হতে বর্ণিত:

আমি আমাদের এক ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করি, অত:পর পলায়ন করি। আমি ঠিক মধ্যাহ্নের আগে ফিরে এলাম এবং আমার পিতার পেছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি তাকে (ঐ ক্রীতদাসকে) এবং আমাকে ডাকলেন এবং বললেন: সে তোমার প্রতি যা করেছে, তুমিও তেমন করো. সে [ক্রীতদাস] আমাকে মাফ করে দিল। তখন তিনি (আমার পিতা) বললেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় আমরা মুকাররিনের পরিবারভুক্ত ছিলাম এবং আমাদের একজন মাত্র ক্রীতদাসি ছিল। আমাদের একজন তাকে চড় মারলো। এই খবর রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পৌঁছল এবং তিনি বললেন: তাকে মুক্ত করে দাও। তারা (পরিবারের লোকজন) বললেন: সে ছাড়া আমাদের আর কোন সাহায্যকারি নেই। কাজেই তিনি বললেন: তাহলে তাকে কাজে নিযুক্ত করো, আর যখনই তোমরা তাকে কাজ হতে অব্যাহতি দিতে সমর্থ হও, তাকে মুক্ত করে দাও।

[সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৪৩৯১; ইংরেজি অনুবাদ: বুক ১৫, নম্বর ৪০৮১; http://sunnah.com/urn/240810]

হাদিস-৭: দাসিকে বিবাহে উৎসাহ প্রদান

আবু মুসা(রা.) হতে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

যার একটি ক্রীসদাসি আছে আর সে তাকে শিক্ষাদীক্ষা দান করে, তার সাথে সদয় ব্যবহার করে, অত:পর তাকে মুক্ত করে বিবাহ করে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। [সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ২৫৮৪; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি. ৩, বুক ৪৬, নম্বর ৭২০; http://sunnah.com/urn/23840]

 

তিন.

দাসত্বের পথ এবং ইসলাম

সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন যখন নাযিল হচ্ছিল তখন শুধু আরবে নয় বরং সারা দুনিয়ায় ক্রীতদাসপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। স্বাধীন মানুষ দাসত্ব বরণ করত প্রধানত দুটি উপায়ে:

১. স্বাধীন ব্যক্তিকে বেচাকেনার মাধ্যমে ক্রীতদাস বানানো: এই পথটি ইসলামে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইসলামে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে কেনাবেচা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-১]

২. যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানো:

যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানো সেই সময় একটি স্বাভাবিক রীতি ছিল। কোন মুসলিম যদি যুদ্ধে অমুসলিমদের হাতে বন্দী হতো তাকেও এই পরিণতি বরণ করতে হতো। ইসলামে যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানো কোন জরুরী বিষয় নয়। ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ নিয়ে মুক্ত করতে পারে, বিনা মুক্তিপণেও মুক্ত করতে পারে, যুদ্ধবন্দি বিনিময় করতে পারে বা প্রয়োজনবোধে অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের রীতি অনুসারে দাস-দাসীও বানাতে পারে। তবে কোন রাষ্ট্রের সাথে মুসলিমদের যদি এমন কোন চুক্তি থাকে যে তারা তাদের যুদ্ধবন্দীদের দাস বানাতে পারবে না, তবে সেই চুক্তি রক্ষা করা মুসলিমদের জন্য জরুরি।

২.১ কেন ইসলামে এই সুযোগ রহিত করা হলো না?

ইসলাম একটি বাস্তব ধর্ম। ইসলাম এমন কোন ধর্ম না যে কেউ এক গালে চড় মারলে আরেকটা গাল পেতে দিতে বলবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজ অনুসারিদের বিপদ বা অস্তিত্ব সংকটের মুখে ফেলে দেবার ধর্ম ইসলাম নয়। যেখানে মুসলিমরা অমুসলিমদের হাতে যুদ্ধবন্দী হলে তাদেরকেও দাসত্ব বরণ করতে হতো, সেখানে ইসলাম যদি একই সুযোগ না রাখতো তবে তা হতো শত্রুর হাতে এক বিরাট মারণাস্ত্র তুলে দেওয়ার নামান্তর। কাজেই যতদিন মুসলিমদের জন্য এই নিশ্চয়তা না আসে যে তাদের যুদ্ধবন্দীদের দাসদাসী বানানো হবে না, ততদিন পর্যন্ত মুসলিমদের জন্যও এই সুযোগ রহিত করার কোন যুক্তি থাকতে পারে না।

২.২ দাসত্বের এই পথ বন্ধ করার উপায়

ইসলামে দাসত্ব বরণের এই পথটি যদিও খোলা রয়েছে তবে একটি বন্ধযোগ্য পথ, যা বন্ধ করার চাবি অমুসলিম রাষ্টসমূহের হাতেই দেওয়া আছে। যে কোন অমুসলিম রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে এই ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে ‘আমরা একে অপরের যুদ্ধবন্দীদের দাস-দাসী বানাবো না’, দাসত্বে প্রবেশের এই উন্মুক্ত পথটি বন্ধ করে দিতে পারে।

 

চার.

ইসলামে দাসমুক্তির পথসমূহ

১. যাকাত: ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ যাকাত। আর এই যাকাতের একটা খাত নির্ধারণ করা হয়েছে দাসমুক্তির জন্য। [দ্রষ্টব্য ৯:৬০]

২. কাফফারা: বিভিন্ন গুনাহ বা ভুলের কাফফারা নির্ধারণ করা হয়েছে দাস মুক্তকরণকে। [দ্রষ্টব্য ৫:৮৯, ৫৮:৩, ৪:৯২]

৩. লিখিত চুক্তি: ইসলাম দাস-দাসিদের তার মালিকের সাথে মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তির অনুমতি প্রদান করেছে।

তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জান যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে অর্থ-কড়ি দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে দান কর। [২৪:৩৩, প্রাসঙ্গিক অংশ]

৪. ক্ষতিপূরণ: কোন দাস/দাসিকে চপেটাঘাত করা হলে তার শাস্তি হিসেবে উক্ত দাস/দাসিকে মুক্ত করে দিতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-৬]

৫. দাসমুক্তকরণে উৎসাহ প্রদান:

৫.১ দাসমুক্তিকে একটি বিরাট সওয়াবের কাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: আয়াত-২]

৫.২ বিভিন্ন প্রাকৃতিক নির্দশনের সময় দাসমুক্তির নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, যেমন; চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ কালে। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ: ভলি.২, বুক ১৮, নম্বর ১৬৩; ভলি.৩, বুক ৪৬, নম্বর ৬৯৫; ভলি.৩, বুক ৪৬, নম্বর ৬৯৬]

৫.৩ মুক্তিকামি দাসদাসীদের অর্থকড়ি প্রদান করে সাহায্য করতে বলা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য ২৪:৩৩]

৫.৪ মালিকের অধিক পছন্দনীয় এবং অধিক দামী দাস-দাসীর মুক্তিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবে কম থাকে। তাই ঘোষণা করা হয়েছে যে, সর্বোত্তম দাসমুক্তি হচ্ছে সবচেয়ে দামী এবং মালিকের অধিক পছন্দনীয় দাসকে মুক্ত করা। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৩, বুক ৪৬, নম্বর ৬৯৪]

৫.৫ দাস-দাসি নিজের সমান হয়ে যাবে এমন আশঙ্কায় যারা তাদের দান করা থেকে বিরত থাকে তাদের তিরস্কার করা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য ১৬:৭১]

৫.৬ কোন ক্রীতদাস যদি একাধিক মালিকের আয়ত্বাধীনে থাকে এবং কোন একজন মালিক তার অংশ হতে ঐ দাসকে মুক্ত করে দেয় তবে উক্ত মালিকের জন্য ঐ ক্রীতদাসকে অপর অংশীদারদের হতেও মুক্ত করে দেওয়াকে জরুরী করে দেওয়া হয়েছে। মালিক তাতে অসমর্থ হলে, উক্ত ক্রীতদাসকে মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করার নিমিত্তে কাজ করার অনুমতি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ভলি. ৩, বুক ৪৪, নম্বর ৬৭২]

৫.৭ দাসিকে শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে মুক্ত করে বিবাহকারীকে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী বলা হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-৭]

 

পাঁচ.

ইসলামে দাস/দাসী’র অধিকার ও মর্যাদা

১. ভ্রাতৃত্বের মর্যাদা:

ইসলাম দাসদের ভাইয়ের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-২]

২. নেতৃত্বের অধিকার:

ইসলামে দাসও আমীর হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে তাকে মান্য করা সকলের জন্য জরুরি। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৭২২৯; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৯, বুক ৮৯, নম্বর ২৫৬; http://sunnah.com/urn/67120]

৩. অন্ন-বস্ত্রের সমানাধিকার:

৩.১ মুনিব যা খাবে দাসকেও তাই খাওয়াতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-২]

৩.২ মুনিব যা পরবে দাসকেও তা-ই পরাতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-২]

৪. কাজ-কর্মে সহানুভূতি লাভের অধিকার:

৪.১ দাসের ওপর তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের বোঝা চাপানো যাবে না। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-২]

৪.২. দাসের ওপর অতিরিক্ত কোন কাজের বোঝা দিতে হলে নিজেকেও তাতে সাহায্য করতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-২]

৫. সম্মান লাভের অধিকার:

৫.১ দাস-দাসীদের ‘আমার বান্দা/দাস’ ‘আমার বান্দি/দাসী’ বলা যাবে না, বলতে হবে ‘আমার বালক’, ‘আমার বালিকা’। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-৩]

৫.২ দাস-দাসীদের চপেটাঘাত পর্যন্ত করা যাবে না। তাদেরকে চপেটাঘাত করা হলে এর শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে মুক্ত করে দিতে হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-৬]

৫.৩ দাস-দাসীদের ওপর কোন অপবাদ আরোপ করা যাবে না। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-৫]

৬. ধর্মীয় মর্যাদা:

ইসলামে একজন দাসের ধর্মীয় মর্যাদা একজন স্বাধীন মুসলিমের চেয়ে কোন অংশে কম নয় বরং বেশি। কেননা, যদি কোন দাস তার মালিকের প্রতি সৎ এবং বিশ্বস্ত থাকে এবং তার প্রভুর (আল্লাহর) ইবাদতও যথাযথভাবে করে তবে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ভলি ৩, বুক ৪৬, নম্বর ৭২২]

৭. ন্যায়বিচার লাভের অধিকার:

ইসলাম ক্রীতদাসের ন্যায়বিচার লাভের অধিকারকে নিশ্চিত করে। বিশ্বে যেখানে দাসদের ওপর চলছিল ইচ্ছামত অত্যাচার, নিপীড়ণ; দাসদের হত্যা করাও যখন ছিল আইনসিদ্ধ, সেই সময় ইসলাম ঘোষণা করে কঠোরতম সতর্কবাণী, কেউ কোন ক্রীতদাসকে হত্যা করলে তাকেও হত্যা করা হবে, কেউ কোন ক্রীতদাসের অঙ্গহানি ঘটালে তারও অঙ্গহানি ঘটানো হবে। [দ্রষ্টব্য: হাদিস-৪]

৮. জৈবিক চাহিদা পূরণের অধিকার:

ইসলাম দাস-দাসীদের জৈবিক চাহিদা পূরণের অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং নিজের দাস-দাসীদের বিবাহ দিয়ে দেওয়াকে মুনিবের জন্য দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছে। [দ্রষ্টব্য ২৪:৩২]

৯. পবিত্র জীবন যাপনের অধিকার:

ইসলামে দাসীদের পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। [২৪:৩৩, প্রাসঙ্গিক অংশ]

১০. বিবাহের ক্ষেত্রে মতামত প্রদানের অধিকার:

কোন মুনিব তার ক্রীতদাসির সাথে আলোচনা না করে তাকে কারো সাথে বিবাহ দিতে পারবে না। [দ্রষ্টব্য: বুখারি, হাদিস নম্বর ৭০৫৬; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৯, বুক ৮৬, নম্বর ১০০; http://sunnah.com/urn/65560]

১১. ক্রীতদাসি এবং তার শিশুর একত্রিত থাকার অধিকার:

কোন ক্রীতদাসীকে ভিন্ন কোথাও বিক্রি করে তার থেকে তার শিশুকে বিচ্ছিন্ন করার কোন অনুমতি ইসলামে নেই, এবং এই ধরণের বেচাকেনা নিষিদ্ধ। [দ্রষ্টব্য: সুনান আবু দাউদ, ইংরেজি অনুবাদ: বুক ১৪, নম্বর ২৬৯০]

 

ছয়.

শেষের কথা

এতক্ষণ তো দেখলেন প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ইসলামে দাস/দাসীদের অবস্থান কোথায় ছিল। এবার মাত্র কয়েক শতক আগে পাশ্চাত্যের Slave code-এ দাস/দাসীদের আইনসিদ্ধ অবস্থান কোথায় ছিল তার একটু নমুনা দেখা যাক:

Virginia, 1705 – “If any slave resists his master…correcting such a slave, and shall happen to be killed in such correction…the master shall be free of all punishment…as if such accident never happened.”

Alabama, 1833, section 31 – “Any person or persons who attempt to teach any free person of color, or slave, to spell, read, or write, shall, upon conviction thereof by indictment, be fined in a sum not less than two hundred and fifty dollars, nor more than five hundred dollars.”

Alabama, 1833, section 32 – “Any free person of color who shall write for any slave a pass or free paper, on conviction thereof, shall receive for every such offense, thirty-nine lashes on the bare back, and leave the state of Alabama within thirty days thereafter…”

Alabama, 1833, section 33 – “Any slave who shall write for any other slave, any pass or free-paper, upon conviction, shall receive, on his or her back, one hundred lashes for the first offence, and seven hundred lashes for every offence thereafter…”

South Carolina, 1712-No slave shall be allowed to work for pay, or to plant corn, peas or rice; or to keep hogs, cattle, or horses; or to own or operate a boat; to buy or sell; or to wear clothes finer than ‘Negro cloth’

[সূত্র এখানে: http://en.wikipedia.org/wiki/Slave_codes]

অর্থাৎ দাসদের পড়া-লেখা শেখার, মজুরি খাটার, কিছু উৎপাদন করার, গবাদি পশু রাখার, নৌকা রাখা/চালানোর, কেনা-বেচা করার, ভালো কাপড় পরিধান করার অধিকারই শুধু হরণ করা হয় নাই, মালিককে এতটুকু অধিকারও দেওয়া হয়েছিল যে যদি ক্রীতদাসকে সংশোধন করতে গিয়ে সে তাকে মেরেও ফেলে, তবু তার কোন শাস্তি হবে না, যেন এমন কোন ঘটনাই ঘটে নাই!

এরপরও যদি কেউ দাসপ্রথার কথা এলেই ইসলামের দিকে আঙুল উচুঁ করতে চান, তবে বলতেই হবে, যারা চোখ বন্ধ করে ঘুমান তাদের জাগাবার সাধ্য কারো নেই।

[নোট: এই লেখায় দাস-দাসীদের সাধারণ বিষয়গুলো নিয়েই মূলত আলোচনা করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই দাস বলতে দাস-দাসী উভয়কে বুঝানো হয়েছে। লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় একটি প্রসঙ্গ ইচ্ছা করেই আলোচনায় আনা হয় নাই, সেটি হচ্ছে- দাসীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? তা নিম্নে উল্লেখ করা হল]

ইসলামে ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌন সম্পর্কের বৈধতার স্বরূপ

[পাঠককে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো এই লেখাটি পড়ার আগে দাসপ্রথা ও ইসলাম লেখাটি পড়ে নেবার জন্য।]

ভূমিকাইসলামকে আক্রমণ করার যতগুলো মোক্ষম অস্ত্র ইসলামবিদ্বেষীদের হাতে রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই প্রোপাগাণ্ডা যে ইসলাম ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌন-সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে বরং ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীদের যৌনদাসীতে পর্যবসিত করেছে। তাদের এই প্রোপাগাণ্ডায় যে কেউ ভেবে বসতে পারেন, ইসলামই বুঝি ক্রীতদাসি আর যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রবর্তক। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ক্রীতদাসি আর যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে অতিপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা যথেচ্ছ, অমানবিক ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারকে ইসলাম সীমিত, মানবিক ও নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আনার পাশাপাশি তাদেরকে জৈবিক চাহিদা পূরণের একটি বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ সুযোগ প্রদান করেছে যার ফলে একদিক দিয়ে তাদের সন্তান জন্মগতভাবে স্বাধীন ও পিতার সম্পদের উত্তারিকারী হয়, অন্যদিক সন্তান গর্ভধারণের মাধ্যমে ক্রীতদাসিটি ক্রমান্বয়ে মুক্তি লাভ করে। মূল আলোচনায় যাবার আগে কয়েকটি বিষয় আমাদের ভালোভাবে মনে রাখতে হবে:

০.১ দাসপ্রথা ইসলামের উদ্ভাবন নয়, বরং দাসপ্রথা অতিপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। ইসলাম একদিকে সমাজে প্রচলিত অমানবিক দাসপ্রথাকে নিজ আওতার ভেতরে মানবিক করতে সচেষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে নানাবিধভাবে দাসমুক্তকরণের পথ উন্মুক্ত করেছে।

০.২ ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার দাসপ্রথার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, ইসলামের কোন অপরিহার্য, অবশ্য করণীয়, অথবা আকাঙ্ক্ষিত বিষয় নয়। ইসলাম নিজ গণ্ডির ভেতরে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছে মাত্র।

০.৩ দাসপ্রথার নিয়মকে ইসলামের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না।

এক. যুদ্ধবন্দি/যুদ্ধবন্দিনীর দাসত্ববরণ: একটি প্রচলিত পন্থা

১.১  যুদ্ধবন্দির দাসত্ববরণের প্রচলিত পন্থা ও ইসলামের অনুমোদন

ইসলামি রাষ্ট্রনায়ক যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে নিম্নোক্ত যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন:

১.১.১ কতল করতে পারেন (এটি কেবল সেইসব যুদ্ধক্ষম পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য যারা ইসলামি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে, নারী-শিশু-বৃদ্ধের জন্য প্রযোজ্য নয়।)

১.১.২ নি:শর্তভাবে মুক্ত করে দিতে পারেন।

১.১.৩ মুক্তিপণ সাপেক্ষে মুক্ত করে দিতে পারেন।

১.১.৪ যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে ব্যবহার করতে পারেন।

১.১.৫ প্রচলিত অন্য কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেন। যেমন, দাসপ্রথা প্রচলিত থাকলে তাদেরকে দাস/দাসি হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করে দিতে পারেন।

কাজেই,

যুদ্ধবন্দিদের দাস-দাসি বানানো একটি প্রচলিত পন্থা ছিল যা ইসলামের কোন বাধ্যতামূলক বা অপরিহার্য নির্দেশ তো নয়ই, কোন আকাঙ্ক্ষিত বিষয়ও নয়, বরং অনেকগুলো অনুমোদিত পন্থার একটি মাত্র। যদি ইসলামি রাষ্ট্রনায়ক কোন কারণবশতঃ পঞ্চম পন্থাটি অবলম্বন করেন, সেক্ষেত্রে বণ্টিত হবার পর একজন যুদ্ধবন্দিনী একজন ক্রীতদাসি হিসেবে পরিগণিত হবেন।

১.২ কেন এর অনুমোদন?

ইসলাম যদিও স্বাধীন ব্যক্তির বেচাকেনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে ক্রীতদাসপ্রথার মূল উৎস বন্ধ করে দিয়েছে, দাসমুক্তির নানাবিধ পথ উন্মুক্ত করেছে কিন্তু যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসী বানানোর এই পথটি বন্ধ করেনি। কেন?

১.২.১ ইসলাম একটি বাস্তব ধর্ম। একগালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেবার ধর্ম ইসলাম নয়। ইসলামে যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি বানানো কোন জরুরী বিষয় না হলেও যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি বানানো তখনকার সময়ে একটি প্রচলিত নিয়ম ছিল। যুদ্ধে মুসলিমরা অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলে তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হতো। যতদিন পর্যন্ত মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি হবার সম্ভাবনা দূর না হয়, ততদিন পর্যন্ত মুসলিমদের জন্য অমুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি বানানোর সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজ অনুসারীদের নিশ্চিত বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেবার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ইসলাম কিছুতেই নিতে পারে না। তবে ক্রীতদাস প্রথার এই উন্মুক্ত দ্বার বন্ধ করার চাবি অমুসলিমদের হাতেই রয়েছে। অমুসলিমরা মুসলিমদের সাথে মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি না বানানোর চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে ক্রীতদাস প্রথার এই উন্মুক্ত পথটি চিরতরে বন্ধ করে দিতে পারে।

১.২.২ মুক্তিপণ বা বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তকরণের পরও যে বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবন্দি রয়ে যেত, তাদের নি:শর্তভাবে মুক্ত করে দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকিস্বরূপ ছিল, তেমনি কারাবন্দি করে রাখাও ছিল ব্যয়বহুল ও অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত চাপস্বরূপ। সহজ পন্থা ছিল প্রচলিত নিয়মে ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি হিসেবে তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া।

১.২.৩ যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি হিসেবে বিভিন্ন পরিবারে বণ্টন করে দেবার ফলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকতো, অন্যদিকে মুনিবের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ করে ক্রীতদাস/ক্রীতদাসি নিজেদের মুক্ত করার সুযোগও পেত। অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে খুব কাছে থেকে ইসলামকে পর্যবেক্ষণ করে ইসলামে দাখিল হবার একটি সুযোগও তাদের সামনে খোলা থাকতো।

দুই.ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনী সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াতক্রীতদাসিদের (ক্রয়কৃত/অধিকারলব্ধ দাসি বা বণ্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনী) জন্য কুরআনে ব্যবহৃত সাধারণ পরিভাষা হচ্ছে “মা- মালাকাত আইমানুকুম” বা “তোমাদের ডান হাতের মালিকাধীন/মালিকানাভুক্ত”। নিচে ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনী সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াত বা আয়াতের প্রাসঙ্গিক অংশের অনুবাদ তুলে ধরা হলো:

আয়াতসূত্র-১: কেবল মুনিবের জন্য নিজ ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্কের অনুমোদন

তবে তাদের স্ত্রী ও ডান হাতের মালিকানাভুক্তদের (দাসীদের) ক্ষেত্রে [যৌনাঙ্গকে]  সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। [২৩:৬]

নোট: এই অনুমোদন নি:শর্ত নয়, পুরো পোস্টটি পড়ার পর এই অনুমোদনের ক্ষেত্র ও যৌক্তিকতা বুঝা যাবে।

আয়াতসূত্র-২: বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীদের পূর্বেকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ধরা হবে। 

এবং [তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ] বিবাহিত নারী তারা ব্যতিত যারা তোমাদের ডান হাতের মালিকাধীন। [৪:২৪, প্রাসঙ্গিক অংশ]

নোট: স্বামী ছাড়া যেসব বিবাহিত নারী যুদ্ধবন্দিনী হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজন্য, স্বামীসহ ধৃত হলে বিবাহ অক্ষুন্ন থাকে, দ্রষ্টব্য: সূত্র-৯]

আয়াতসূত্র-৩: অন্যের ক্রীতদাসিকে মুনিবের অনুমতিক্রমে বিবাহের অনুমোদন

আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না।  [প্রাসঙ্গিক অংশ, ৪:২৫]

আয়াতসূত্র-৪: দাসীদের বিবাহ প্রদানের নির্দেশ

তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও।  [প্রাসঙ্গিক অংশ, ২৪:৩২]

আয়াতসূত্র-৫: দাসীদের পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা

তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ২৪:৩৩]

তিন.সংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস, ফাতাওয়া ও আইনসূত্র-১ (হাদিস)

আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) আওতাসে ধৃত যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত এরশাদ বর্ণনা করেন: গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করো না যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে এবং যে নারী গর্ভবতী নয় তার সাথে (সঙ্গম) করো না যতক্ষণ না তার একটি ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়। [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৭ ]

সূত্র-২ (হাদিস)

রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি হতে বর্ণিত: আমি কি তোমাদেরকে বলবো না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুনাইনের দিনে যা বলতে শুনেছি: “আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে পানি দেওয়া (অর্থাৎ কোন গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করা)। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় কোন যুদ্ধবন্দিনী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সে গর্ভবতী নয়। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় বণ্টন হবার আগে গণিমতের কোন মাল বিক্রয় করা।” [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৮ ]

সূত্র-৩ (হাদিস)

হারুন ইবনুল আসিম বর্ণনা করেন: উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদ(রা.)-কে সৈন্যবাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর তারা আসাদ গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তারা একটি সুন্দরী নারীকে বন্দি করেন এবং জিরার তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তার সঙ্গীদের  থেকে তাকে (নারীটিকে) চাইলেন, তারা দিয়ে দিল এবং তিনি তার সাথে সঙ্গম করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং খালিদ(রা.)এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে বললেন। খালিদ(রা.) বললেন, অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি। জিরার বললেন, “না, উমরকে চিঠি না পাঠানো পর্যন্ত নয়।” উমর উত্তরে লিখলেন, তাকে রজম (প্রস্তারাঘাতে হত্যা) করতে হবে। কিন্তু চিঠি পৌঁছবার আগেই জিরার ইন্তেকাল করলেন। খালিদ(রা.) বললেন, “আল্লাহ জিরারকে অপমানিত করতে চাননি।” [সূত্র: বায়হাকি’র সুনান আল কুবরা, হাদিস নং ১৮৬৮৫]

লক্ষ্য করুন:

৩.৩.১ খলিফা বা খলিফা হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক বণ্টন হবার আগে যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস করা যে অবৈধ সেটা সুবিদিত ছিল।

৩.৩.২ উক্ত কর্মটিকে ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কেননা, উমর(রা.) এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে ব্যভিচারের হদ নির্ধারণ করেছেন।

সূত্র-৪ (হাদিস)

আমর বিন সুহাই’ব তার পিতার বরাতে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যখন তোমাদের কেউ তার ক্রীতদাসের সাথে তার ক্রীতদাসির বিবাহ দেয়, তার (ক্রীতদাসির) গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো তার (মুনিবের) জন্য উচিত নয়। [সূত্র: সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪১১৩]

সূত্র-৫ (ফাতাওয়া)

মালিক (রহ.) বলেন যে, যদি কোন পুরুষ তার মালিকাধিন একজন ক্রীতদাসির সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকে, অতঃপর সে তার (ক্রীতদাসির) বোনের সাথেও সম্পর্কে জড়িত হতে চায়, উক্ত বোন পুরুষটির জন্য হালাল নয় যতক্ষণ না (প্রথমোক্ত) ক্রীতদাসির সাথে তার সহবাস হারাম হয়ে যায়- বিবাহ, মুক্তকরণ, কিতাবা অথবা অনুরূপ কোন ঘটনার দ্বারা, যেমন যদি সে যদি তাকে (অর্থাৎ প্রথমোক্ত ক্রীতদাসিকে) তার ক্রীতদাসের সাথে বা অন্য কারো সাথে বিবাহ প্রদান করে। [সূত্র: মুয়াত্তা মালিক: বুক ২৮, হাদিস নং- ১১২৯]

সূত্র-৬ (হাদিস/ফাতাওয়া)

ইয়াহইয়া মালিক হতে তিনি ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ হতে এবং তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব হতে বলেন, “কোন নারীকে তার ফুপু বা খালার সাথে একই সাথে বিবাহাধীনে রাখা নিষিদ্ধ এবং অন্য পুরুষের সন্তান গর্ভে ধারণকারি কোন ক্রীতদাসির সাথে সহবাস করা নিষিদ্ধ। [সূত্র: মুয়াত্তা মালিক: অধ্যায় ২৮, হাদিস নং-১১১৫]

সূত্র-৭ (ফাতাওয়া)

মালিক (রহ.) বলেন, “মুনিবের জন্য মালিকানা বলে খ্রিস্টান ও ইহুদি ক্রীতদাসি হালাল, কিন্তু মালিকানা বলে পৌত্তলিক (magian) ক্রীতদাসির সাথে সহবাস হালাল নয়।” [মুয়াত্তা মালিক, ইংরেজি অনুবাদের বুক নং ২৮, হাদিস নং ৩৮]

সূত্র-৮ (হাদিস)

নুমান ইবনে বশির হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন যে তার স্ত্রীর ক্রীতদাসির সাথে সহবাস করেছিল: যদি সে (অর্থাৎ স্ত্রী) তাকে (অর্থাৎ ক্রীতদাসিকে) তার (অর্থাৎ তার স্বামীর) জন্য হালাল করে থাকে, তাকে (পুরুষটিকে) একশ বেত্রাঘাত করা হবে; আর যদি সে তাকে তার জন্য হালাল না করে থাকে, আমি তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করব। [সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৫৯]

সূত্র-৯ (আইন গ্রন্থ)

“When the army takes a woman captive followed by her husband who is also taken captive sooner or later and either the woman does not have menses during that period or has had upto three menses but she is not taken out of the Territory of War before her husband is taken, their marriage shall continue. Whosoever of the two is taken captive and brought to the Territory of Islam before the other, their marriage shall cease to exist”

[সূত্র:Chapter II :The Army’s Treatment of the Disbelievers, passage 45, The Shorter Book on Muslim International Law, translated by Mahmood Ahmad Ghazi, মূল: কিতাবুস সিয়ার আস সাগির,  লেখক: মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শায়বানী ]

সূত্র-১০ (হাদিস)

আবু মুসা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামম বলেন, “যার কোন ক্রীতদাসি আছে এবং সে তাকে শিক্ষাদীক্ষা দেয়, তার সাথে সদ্ব্যবহার করে, অতঃপর তাকে মুক্তি প্রদান করে বিবাহ করে, সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে।” [সূত্র: বুখারি, অধ্যায় ৪৬, হাদিস নং-৭২০]

সূত্র-১১ (হাদিস)

ইয়াহইয়া মালিক হতে বর্ণনা করেন, তিনি শুনেছেন যে উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) তাঁর ছেলেকে একজন ক্রীতদাসি দান করে বলেন, “তাকে স্পর্শ করো না, যেহেতু আমি তাকে উন্মোচণ করেছি।” [সূত্র: মুয়াত্তা মালিক, অধ্যায় ২৮, হাদিস নং ১১৩০]

সূত্র-১২

উমর (রা.) বলেন, “তার (ক্রীতদাসির) সন্তান তাকে মুক্ত করে যদিও তা মৃত হয়” [সূত্র: মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং ২১৮৯৪]

সূত্র-১৩

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসি তার সন্তান ধারণ করে, সে তার(মুনিবের) মৃত্যুর পর স্বাধীন হয়ে যায়।” [সূত্র: তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৯৪]

সূত্র-১৪

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তান গর্ভধারিণী ক্রীতদাসিকে বিক্রয় করো না।”  [তাবারানি’র মু’যাম আল কাবির, হাদিস নং-৪১৪৭]

চার.ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্কের পন্থা৪.১

৪.১.১ বৈবাহিক পন্থা

৪.১.১.১ নিজ ক্রীতদাসিকে বিবাহ করা: দাসত্বে থাকা অবস্থায় নিজ ক্রীতদাসিকে বিবাহ করা যায় না। কোন মুনিব যদি নিজ ক্রীতদাসিকে বিবাহ করতে চায়, তবে তাকে মুক্ত করে বিবাহ করতে হবে। অর্থাৎ আগে তাকে স্বাধীন করতে হবে, অতঃপর স্বাধীন নারী হিসেবে তাকে বিবাহ করতে হবে। এই ধরণের বিবাহকে ইসলামে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১০]

৪.১.১.২. অন্যের ক্রীতদাসিকে বিবাহ করা: অন্যের ক্রীতদাসিকে মালিকের অনুমতিক্রমে বিবাহ করা যায়। [দ্রষ্টব্য: আয়াতসূত্র-৩]

২. অবৈবাহিক বা উপবৈবাহিক পন্থা (concubinage): এই পন্থা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা আসছে। তার আগে আমরা উপপত্নী (concubine) এবং উপবৈবাহিক বন্ধন (concubinage) সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করব।

৪.২

উপপত্নী ও উপবৈবাহিক বন্ধন:

৪.২.১ উপবৈবাহিক বন্ধনের (concubinage) ইসলামপূর্ব প্রচলন [সূত্র: উইকিপিডিয়া]

কুরআন অবতরণের অনেক আগে থেকেই উপপত্নী গ্রহণ করা সামাজিক ভাবে স্বীকৃত একটি বিষয় ছিল।

৪.২.১.১ প্রাচীন গ্রিসে,  উপপত্নী (গ্রিক “pallakis”) রাখার প্রচলনের কথা সামান্য লিপিবদ্ধ থাকলেও এথেনিয়ান ইতিহাস জুড়েই তা বিদ্যমান ছিল। hetaera এর কিছু ব্যাখায় বলা হয়, তারা ছিল উপপত্নী যাদের কোন একজন পুরুষের সাথে স্থায়ী সম্পর্ক ছিল।

৪.২.১.২ প্রাচীন রোমে ‘উপবিবাহ’ ছিল একটি প্রচলিত প্রতিষ্ঠান যা একজন পুরুষকে স্ত্রীভিন্ন এমন একজন নারীর (concubina, বহুবচনে concubinae) সাথে একটি অলিখিত কিন্তু স্বীকৃত বন্ধনে আবদ্ধ হবার অনুমতি প্রদান করে, যার নিচু সামাজিক মর্যাদা বিবাহের জন্য প্রতিবন্ধক ছিল। ধর্মীয় এবং পারিবারিক সংহতির জন্য হুমকিস্বরূপ না হওয়া অবধি ‘উপবিবাহ’ গ্রহণযোগ্য ছিল। “concubina” বলে পরিচিত হওয়াকে অসম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হতো না, কেননা এই উপাধি প্রায়ই সমাধিপ্রস্তরে খোদিত থাকতো।

৪.২.১.৩ প্রাচীন চীনে, সফল পুরুষরা প্রায়ই একাধিক উপপত্নী প্রতিপালন করতেন- চৈনিক সম্রাটগণ রাখতেন হাজার হাজার।

৪.২.২ উপপত্নী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

৪.২.২.১ কোন স্বাধীন নারীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের কোন সুযোগ ইসলামে নেই।

৪.২.২.২  কিন্তু সমাজে দাসপ্রথা বিদ্যমান থাকলে  নিজ ক্রীতদাসিকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের অনুমতি ইসলামে রয়েছে (বণ্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনীও ক্রীতদাসি হিসেবে পরিগণিত)। যে ক্রীতদাসির সাথে তার মুনিব শারিরিক সম্পর্ক স্হাপন করে, সে অন্যান্য ক্রীতদাসি থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। এ ধরণের ক্রীতদাসিকে বলা হয় সারিয়্যাহ বা উপপত্নী। আরবী সারিয়্যাহ শব্দটি ‘সির’ হতে আগত যার অর্থ বিবাহ। উপপত্নীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারি পুরুষের কোন বৈবাহিক চুক্তি সম্পাদিত হয় না, কিন্তু সামাজিকভাবে স্বীকৃত এমন একটি বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয় ইসলাম যার অনুমোদন প্রদান করে।

৪.৩ ইসলামে উপপত্নী ও স্ত্রীর সাদৃশ্য

ইসলামে উপপত্নী অনেকদিক দিয়েই স্ত্রীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উপপত্নী সংক্রান্ত অনেক বিধানই স্ত্রীর বিধানের সাথে মিল রেখে করা হয়েছে। নিচে কিছু সাদৃশ্য তুলে ধরা হলো:

w 1

৪.৩.১ নিজের স্ত্রীর জন্য যেমন স্বামী ভিন্ন অন্য কারো সাথে শারিরিক সম্পর্ক বৈধ নয়, তেমনি উপপত্নী ক্রীতদাসির জন্য মুনিব ভিন্ন অন্য কোন পুরুষের সাথে শারিরিক সম্পর্ক বৈধ নয়। অর্থাৎ স্ত্রী এবং উপপত্নী উভয়েই একইসাথে কেবলমাত্র একজন পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক রাখতে পারে।

৪.৩.২ কোন পুরুষ বিবাহ-বহির্ভূতভাবে কোন স্বাধীন নারীর সাথে যেমন দৈহিক সম্পর্ক রাখতে পারে না, তেমনি নিজ মালিকাধীন ক্রীতদাসি ভিন্ন অন্য কোন নারীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি নিজ স্ত্রীর মালিকাধীন ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনকেও ব্যভিচার হিসেবে গন্য করা হয়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৮]

৪.৩.২ একই সাথে দুই সহোদর বোনকে যেমন বিবাহ করা যায় না, তেমনি একই সাথে দুই সহোদর ক্রীতদাসিকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৫]

৪.৩.৩ পিতার উপপত্নী ক্রীতদাসির অবস্থান সন্তানদের জন্য নিজের মায়ের মতো। পিতার উপপত্নী ক্রীতদাসি পুত্রের জন্য সেরকমভাবেই হারাম যেভাবে তার আপন মা তার জন্য হারাম। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১১]

৪.৩.৪ নিজ স্ত্রীর সন্তান যেমন বৈধ ও স্বীকৃত, তেমনি উপপত্নী ক্রীতদাসির সন্তান ও বৈধ এবং স্বীকৃত।

৪.৩.৫ উপপত্নী ক্রীতদাসির সন্তান, স্ত্রীর সন্তানের মতোই মুক্ত সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয়।

৪.৩.৬ উপপত্নী ক্রীতদাসির সন্তান স্ত্রীর সন্তানদের মতোই পিতার সম্পত্তির উত্তারাধিকারী।

পাঁচ. ক্রীতদাসি এবং যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে ইসলামী নিয়ন্ত্রণ

৫.১ বণ্টন হবার আগে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ

অনেকেই ভেবে থাকেন, যুদ্ধের ময়দানেই যে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যে কোন মুসলিম যোদ্ধা ইচ্ছেমতো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, ইসলামে এ ব্যাপারে কোন বাধা-নিষেধ তো নেই-ই, বরং এটিই সম্ভবত ইসলামী নিয়ম। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। যুদ্ধক্ষেত্রে তো নয়ই এমন কি যুদ্ধ শেষ হলেও বন্টন হবার আগে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্হাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ যদি এ ধরণের কোন কার্যে লিপ্ত হলে তবে সেটাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয় এবং উক্ত ব্যক্তির ওপর ব্যভিচারের হদ প্রযুক্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, জিরার ইবনুল আযওয়ার খলিফা/খলিফা পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক বণ্টনের আগেই একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস করার কারণে উমর(রা.) তার ওপর ব্যভিচারের হদ প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৩]

৫.২ যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামীসহ ধৃত যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ

বন্দি হবার পর সাধারণভাবে বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীর পূর্বেকার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হিসেবে গণ্য করা হয়, ফলে তাদেরকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করা তথা তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ বিবেচিত হয়। [দ্রষ্টব্য: আয়াতসূত্র-২] যদি যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই একসাথে অথবা একজনকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধির বাইরে নিয়ে যাবার আগেই অন্যজন যুদ্ধবন্দি/বন্দিনী হিসেবে ধৃত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের বিবাহ-বন্ধন অক্ষুন্ন থাকবে, ফলে উক্ত যুদ্ধবন্দিনীর সাথে স্বামী ভিন্ন অন্য কারো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন অবৈধ হবে। যদি শুধুমাত্র একজন যুদ্ধক্ষেত্রে ধৃত হয়ে ইসলামী সীমানায় পৌঁছে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হিসেবে গণ্য হবে। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৯]

৫.৩ ইদ্দতকাল অতিবাহিত হবার আগে ক্রীতদাসি/যুদ্ধবন্দিনীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ

ক্রীতদাসি ক্রয় করলেই বা বন্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনী লাভ করার সাথে সাথেই একজন মুসলিমদের জন্য তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন বৈধ হয়ে যায় না, বরং এক ইদ্দতকাল (তথা একটি মাসিক চক্র) অতিবাহিত হবার আগে তাদের সাথে মিলিত হওয়া নিষিদ্ধ। [এই নিয়ম সেসব ক্রীতদাসি/যুদ্ধবন্দিনীদের জন্য যারা গর্ভবতী নন] [ দ্রষ্টব্য: সূত্র-২]

৫.৪ গর্ভবতী ক্রীতদাসি/যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা

ক্রয়কৃত ক্রীতদাসি বা বন্টনকৃত যুদ্ধবন্দিনী যদি গর্ভবতী হয়, তবে সন্তান প্রসবের আগে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা নিষিদ্ধ। [ দ্রষ্টব্য: সূত্র-১, সূত্র-২]

৫.৫ বিবাহিত ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা

যদি মুনিবের অনুমতিক্রমে কোন ক্রীতদাসি অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে মুনিবের জন্য উক্ত ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক তো বটেই এমনকি যৌনাঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাত করাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৪]

৫.৬ যে ক্রীতদাসির সাথে মুনিবের দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে তার বোনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা

যদি সহোদর দুই বোন কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসি হিসেবে থাকে, মুনিব কোন একজনের সাথে দৈহিক সম্পর্কে জড়িত থাকা অবস্থায় অন্য জনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৫]

৫.৭ নিজ মালিকাধীন নয় এমন ক্রীতদাসির সাথে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ

নিজের মালিকাধীন ক্রীতদাসি ব্যতিত অন্য কারো ক্রীতদাসির সাথে বিবাহ-বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ (এমনকি নিজের স্ত্রীর ক্রীতদাসির সাথেও) এবং তা ব্যভিচার হিসেবে পরিগণিত। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-৮]

ছয়.ক্রীতদাসির সাথে মুনিবের দৈহিক সম্পর্ককে অনুমোদনের যৌক্তিকতা

w2

৬.১ ক্রীতদাসির জৈবিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিতকরণ

ইসলামে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যৌন চাহিদার স্বীকৃতি এবং তা পূরণের বৈধ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইভাবে ক্রীতদাসদাসিদের যৌন চাহিদা পূরণের বৈধ ব্যবস্থাও ইসলামে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ক্রীতদাসিকে পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করার মতো ঘৃণ্য প্রথাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। নিজ ক্রীতদাসিকে শিক্ষদীক্ষা দিয়ে মুক্ত করে বিবাহ করতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু কোন কারণে মুনিব যদি ক্রীতদাসিকে মুক্ত করতে অপারগ হয় সেক্ষেত্রে হয়তো তাকে নিজের সাথে জৈবিক বন্ধনে আবদ্ধ রাখবে (উপপত্নী হিসেবে) অথবা অন্য কারো বিবাহাধীনে দিয়ে দেবে। অর্থাৎ যে কোন অবস্থায় ক্রীতাদাসির জৈবিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রীতদাসিকে বিবাহ প্রদানের মাধ্যমেই যেখানে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ সম্ভব ছিল সেখানে মুনিবের জন্য ক্রীতাদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার বহাল রাখার যৌক্তিকতা কী ছিল? এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

৬.২ মুনিবের সাথে দৈহিক সম্পর্ক অনুমোদনের যৌক্তিকতা

মনে রাখতে হবে ইসলাম ক্রীতদাসির সাথে মুনিবের দৈহিক সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটায়নি, বরং দাসপ্রথায় যেখানে ক্রীতদাসি যৌনপণ্যর মতো যার ইচ্ছে তার উপভোগের সামগ্রী ছিল, ইসলাম সেটাকে একজন মাত্র পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে। সেই পুরুষ হয়তো তার মুনিব অথবা তাকে বিবাহকারী স্বামী।  একজন ক্রীতদাসির জন্য অন্য কোন পুরুষকে বিবাহ করার চেয়ে নিজ মুনিবের সাথে দৈহিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুবিধা হচ্ছে:

৬.২.১ সন্তানের মুক্তি

৬.২.১.১ দাসপ্রথা অনুসারে একজন মুনিবের ক্রীসদাসির সন্তান (যে উক্ত মুনিবের ঔরসজাত নয়, ক্রীতদাসির স্বামীর সন্তান) উক্ত মুনিবের ক্রীতদাস হিসেবে গণ্য হয়।

৬.২.১.২ কিন্তু ক্রীতদাসির সন্তান যদি মুনিবের ঔরসজাত হয়, তবে সে উক্ত মুনিবের সন্তান হিসেবে গণ্য হয়। ফলে সে সন্তান স্বাধীন ও পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।

৬.২.২ ক্রীতদাসির সামাজিক মর্যাদা ও মুক্তির সুযোগ

আমরা আগেই দেখে এসেছি, ইসলামে মুনিবের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনকারি ক্রীতদাসি তথা উপপত্নী অনেকটাই তার স্ত্রী-সদৃশ। ইসলাম মুনিবের সন্তানধারণকারি ক্রীতদাসির সামাজিক মর্যাদাকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে তার মুক্তির একটি পথকেও উন্মুক্ত করেছে:

৬.২.২.১ ক্রীতাদাসি মুনিবের সন্তান গর্ভে ধারণ করার সাথে সাথে মুনিবের জন্য উক্ত ক্রীতদাসিকে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত ক্রীতদাসি মুনিবের পরিবারের স্থায়ী সদস্যে পরিণত হয়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১৪]

৬.২.২.২ ক্রীতদাসি মুনিবের সন্তান প্রসব করলে (জীবিত অথবা মৃত) উক্ত ক্রীতদাসি ‘উম ওয়ালাদ’ বা ‘সন্তানের মা’ হিসেবে অভিহিত হয়। সেই সন্তান মুনিবের বৈধ, স্বাধীন সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয় এবং পিতার সম্পত্তির ঠিক সেরকম উত্তরাধিকার পায় যেরকম স্ত্রী’র সন্তানরা পেয়ে থাকে।

৬.২.২.৩ মুনিবের মুত্যুর পর ‘উম ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসি মুক্ত হয়ে যায়। [দ্রষ্টব্য: সূত্র-১২, সূত্র-১৩]

কাজেই, দেখা যাচ্ছে ক্রীতদাস প্রথায় ক্রীতদাসির ওপর অনিয়ন্ত্রিত যে যৌনাচারের সুযোগ ছিল, ইসলাম সেটাকে নিয়ন্ত্রিত, মানবিক করে তুলে প্রচলিত উপবৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গিয়ে একদিকে ক্রীতদাসির সন্তানকে মুক্ত, বৈধ ও পিতার সম্পত্তির উত্তারিধারী হবার সুযোগ দিয়েছে, অন্যদিকে ক্রীতদাসিকে দিয়েছে একটি পারবারিক ঠিকানা ও মুক্তির পথ।

পরিশেষ:

সমালোচনা করাই যাদের লক্ষ্য তারা সমালোচনা করবেই, কিন্তু চিন্তা ও উপলদ্ধির দ্বার যারা এখনো বন্ধ করেন নাই আশা করি লেখাটি পড়ে স্পর্শকাতর এই বিষয়টি সম্পর্কে তাদের অনেক ভুল ধারণারই অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ।

 

 

 

 

পর্দা, নন- মাহরাম, ফ্রি মিক্সিং, দ্বীন ইসলাম এবং আমরা  

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

এই ইশ্যুতে লিখতে সত্যি বলতে আমার ভয় লাগে। এমন আহামরি দ্বীনদার তো নিজে নই!  কিন্তু হঠাৎ কয়েকটা ঘটনায় এই বিষয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে হল। আল্লাহ আমার সীমাবদ্ধতাগুলো ক্ষমা করে এই লেখায় নিয়্যতের বিশুদ্ধতা দান করুন। আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বিরত থেকে আমার মুসলিম ভাই বোনদের জন্য বরকত প্রার্থনা করছি।

এক ছোট ভাই বলল, “অমুক দীনী বোন following you”  এই নোটিফিকেশন দেখলে সে ঈমানী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়, সে ফিতনা অনুভব করে!  আলহামদুলিল্লাহ! কিছু মুসলিম থাকে যারা নিজেদের ঈমান নিয়ে খুব বেশী ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। সবসময় নিজেকে ফিতনার মধ্যে মনে করে। এবং এর ফলে তারা মানসিক হীনমন্যতায় ভোগে তারা বুঝি খুব খারাপ মুসলিম!! সুবাহানাল্লাহ! এমন অনেক সাহাবী ছিলেন যারা নিজেদের মুনাফিক মনে করতেন, ভাবতেন তারা বুঝি মুনাফিক হয়ে গেছেন!! It’sasignof  তাকওয়া।  it’sasignthatyoufearAllahSubahanawatayala! আলহামদুলিল্লাহ্‌!

বাংলাদেশের মত একটা দেশে যেখানে ৯০% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামটা স্রেফ কিছু আচার অনুষ্ঠান যেখানে নারী পুরুষের মধ্যে যে একটা পর্দার বিধান আছে এবং এই বিষয়ে যে স্ট্রিক্ট  কথাবার্তা আছে কুরআন এবং হাদিসে সে শিক্ষা আমাদের সন্তানদের দেওয়া হয়না। দেওয়ার কথাও না যেখানে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কোন কেয়ার নেই! পরিবার, আত্মীয়- স্বজনদের মধ্যে ইসলামী চর্চার অভাব, কো- এডুকেশন, ছেলেমেয়েদের “বন্ধু আড্ডা গান” এর অবাধ স্বাধীনতা,  জাফর ইকবাল গঙদের সেক্যুলার মগজ ধোলাই,  নোংরা সংস্কৃতি, সস্তা গল্প উপন্যাস, মুভি এসবের পর্দাহীন জীবনের আহবান সবকিছু মিলিয়ে সহজেই অনুমেয় আমরা, আপনারা, আপনাদের সন্তানেরা কিভাবে বড় হচ্ছে। কিভাবে আমরা আশা করব যে ছেলে মেয়েরা নারী পুরুষের মধ্যে পর্দা, নন মাহরামের সাথে নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রেখে চলা এসবের প্রতি সচেতন হবে? এটা আমরা আশা করতে পারি না বলেই আমরা এটাও আশা করতে পারছি না যে সমাজ থেকে অশ্লীলতা, ফ্রি মিক্সিং এর মত বিষয়গুলো  দ্রবীভূত হবে। কিন্তু আমরা এটাও জানি সবাই যখন স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দেয় তখন স্রোতের বিপরীতে কিছু মানুষ থাকে। কিছু মানুষ অবশ্যই থাকে যারা ইসলামটাকে কয়টা আচার অনুষ্ঠান হিসেবে নয় একটি জীবন বিধান হিসেবে দেখে! এটাই ইসলাম আর এরাই মুসলিম যারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ইসলাম দিয়ে  judge করে। এটাই ইসলাম যেখানে মুসলিমরা নিজেদের প্রবৃত্তি আর কামনা বাসনাগুলো নিয়ে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করবে এবং নিজেকে মহান আল্লাহর দরবারে সঁপে দেবে। এরাই তো মুসলিম যারা জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে খোঁজ করবে ইসলাম কি বলে, ইসলাম কি শেখায়, ইসলামের সমাধান কি!

ইসলামে পর্দার কথা আসলেই আমরা চোখ বন্ধ করে  মনে করি এক টুকরো কালো কাপড়। তার চেয়েও বড় কথা পর্দা প্রসঙ্গ আসলেই মেয়েদের কথা ছাড়া ছেলেদের প্রসঙ্গ উঠেই না, ব্যাপারটা এমন যেন ছেলেদের জন্য পর্দার কোন বিধান নেই। কিন্তু আমরা যদি কুরআন খুলে দেখি তাহলে দেখব মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে প্রথমেই বলেছেন ছেলেদের পর্দার কথা। আল্লাহ বলছেন,

 মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন”। [সূরা নূরঃ ৩০]

আল্লাহ আমার আপনার মত গুনাহগার মুসলিমদের তো বটেই   মুমিনদের পর্যন্ত সতর্ক করে বলছেন তারা যেন দৃষ্টি সংযত রাখে। সুবাহানাল্লাহ! তাহলে পর্দার কথা আসলে সবার মনোযোগ মেয়েদের দিকে ফেরানোর আগে চিন্তা করা উচিত আল্লাহর কাছে আমি কতটুকু সততার পরিচয় দিতে পেরেছি। তারপরই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন মেয়েদের পর্দার কথা। আল্লাহ বলছেন,

“(হে নবী), তুমি মুমেন নারীদেরকেও বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিন্মগামি করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমুহের হেফাজত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ায়, তবে তারা (শরীরের) যে অংশ(এমনিই) খোলা থাকে(তার কথা আলাদা), তারা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, তাদের পিতা, তাদের শ্বশুর, তাদের ছেলে, তাদের স্বামীর (আগের ঘরের) ছেলে, তাদের ভাই, তাদের ভাইর ছেলে, তাদের বোনের ছেলে, তাদের (সচরাচর মেলা মেশার) মহিলা, নিজেদের অধিকারভুক্ত সেবিকা দাসি,নিজেদের অধীনস্থ (এমন) পুরুষ যাদের (মহিলাদের কাছ থেকে) কোন কিছুই কামনা করার নেই, কিংবা এমন শিশু যারা এখনো মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে কিছুই জানেনা- (এমন মানুষ ছাড়া তারা যেন) অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, (চলার সময়) জমিনের উপর তারা যেন এমনভাবে নিজেদের পা না রাখে যে সৌন্দর্য তারা গোপন করে রেখেছিল তা (পায়ের আওয়াজে) লোকদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়; হে ঈমানদার ব্যক্তিরা,( ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য) তোমরা সবাই আল্লাহর দরবারে তাওবা কর, আশা করা যায় তোমরা নাজাত পেয়ে যাবে”। [আন নুরঃ ৩১]

আমরা আয়াত দুইটা লক্ষ্য করি ইনশাআল্লাহ। ছেলেদের ক্ষেত্রে অল্প কথায় শেষ হলেও মেয়েদের আয়াতে আরও কিছু  যোগ করা হয়েছে। দৃষ্টি অবনতের পাশাপাশি এসেছে সৌন্দর্য প্রকাশ করে না বেড়ানো, হিজাব, মাহরামদের স্পেসিপিক করে দিয়ে বাকি নন মাহরামদের সাথে পর্দা করা এমনকি বলা হয়েছে গোপন সাজ সজ্জা প্রকাশ না করার জন্য জোরে পদচারনা না করে! সুবাহানাল্লাহ! আর কোথায় আছি আমরা। কোথায় আছে আমাদের বোনেরা!! এবার আমরা কুরআনের অন্য একটা আয়াতে দৃষ্টিপাত করি যেখানে আল্লাহ স্বয়ং নবী পত্নীদের সতর্ক করে বলেছেন,

“হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্যনারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ওআকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরেব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে”। [সূরা আহযাবঃ ৩২]

এবার আমরা একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করি নবী পত্নীদের জন্য আল্লাহর আদেশ যদি এরকম হয় তাহলে আমাদের অবস্থা কি হবে!! এসব হচ্ছে কুরআনের কথা, মহান আল্লাহর কথা। এখানে কোন “না মানে ইয়ে” কিংবা মন খুঁতখুঁত করার কিছুই নেই। কোন যুক্তি নেই নারী পুরুষের সম্পর্ককে সহজ মনে করার। “মুমিন মুমেনা একে অপরের সহযোগী” আয়াত দেখে যারা এইসব সুস্পষ্ট আয়াতগুলোকে হালকা ভেবে পর্দা ভেঙ্গে যাচ্ছেন, অপ্রয়োজনীয় কথা বলা কিংবা লুতুপুতু করে যাচ্ছেন তাদের বলব সেই আয়াতের তাফসীর খুলে দেখুন “সহযোগী” মানে কি বুঝানো হয়েছে। সেখানে কোনভাবেই আপনাকে টেম্পু চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি! কোনভাবেই আপনাকে শয়তানের জন্য ফিতনার দরোজা খুলে রাখার কথা বলা হয়নি। আমাদের ভাবটা এমন যেন শয়তানের সাথে আমরা চুক্তি করে রেখেছি যে শয়তান আমাদের পিছু নেবে না! দীনী বোনেরা ফেসবুকে ছবি আপলোড দেবে আর দীনী ভাইয়েরা সেখানে মাশাআল্লাহ, সুবাহানাল্লাহ কমেন্ট করে  সওয়াব হাসিল করবে (!!)! দীনী ভাইয়েরা ভাবুক ভাবুক স্ট্যাটাস হাঁকাবে আর দীনী বোনেরা সেখানে ভেংচি, চোখ মারা ইমুশনের জোয়ার বইয়ে দীনী ফাজলামো করবে!! কি জায়েজ?? ফেসবুকে উঁচু লেভেলের দীনী স্ট্যাটাস থাকা ভাইরাও তলে তলে ফেসবুক ইনবক্সে টেম্পু চালায় এটাও দেখি আর হিজাব, নিকাব এমনকি তীব্র গরমে হাত মোজা পরার প্রশংসনীয় মুমেন নারীরাও টেম্পু চালিয়ে দীনী ভাইদের মনে ঝড় তুলেছে এমনও আছে!

আরেকটা কথা হল ব্যাপারটা এমন না যে বিয়ে করে, বাচ্চা কাচ্চার বাবা মা হয়ে যাওয়া মানে সব কিছু ওকে হয়ে গেল। কিছু মানুষের আচরন দেখে মনে হয় সূরা নূরের ৩০ আর ৩১ নং  আর সূরা আহযাবের ৩২ নং আয়াতগুলো যেন শুধু অবিবাহিতদের জন্য। তারা কি ভাবতে শুরু করেছে তাদের জন্য আয়াতগুলো invalid হয়ে গেছে? দ্বীনের বুঝ আর ঈমান এত বেশী হয়ে গেছে যে যাবতীয় ফিতনাকে damn care ভাব দেখাচ্ছে?? আল্লাহ আক্বল দান করুন। আল্লাহ দ্বীনের  বুঝ বাড়িয়ে দিন। আমীন।

“মানুষ দুর্বল সৃজিত হয়েছে। (মেয়েদের প্রতি)” [সুরা নিসাঃ ২৮] 

কথা হচ্ছে তাদের সাথে যারা চান দ্বীন ইসলামকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে। আলহামদুলিল্লাহ কিছু মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে যাদের ঈমান সবসময় আমাকে  অনুপ্রেরণা দেয়। যে বিষয়গুলো আমার কাছে একসময় খুবই তুচ্ছ মনে হত কিংবা মনেই হত না এসবের কোন গুরুত্ব আছে দ্বীনের এমন বিষয়েও কিছু কিছু মানুষের সিরিয়াসনেস আমাকে প্রায়ই ঈমানের তাগিদ দেয়। নিজের ভুলগুলো তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়। নিজের দ্বীনকে তখনই অর্থহীন মনে হয়! আল্লাহর দ্বীনকে যারা সিরিয়াসলি নেন আমার ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতা বলে তারা অবশ্যই একদিন নারীদের সাথে ফ্রি মিক্সিং, পর্দা maintain না করা এসবের ভয়াবহতা বুঝতে পারে। একদিন কুরআনের আয়াতগুলো তাদেরকে ভাবায় যারা সত্যিই মনে করে কুরআনের এক একটা আয়াত এক একটা উপদেশ, সমাধান, আদেশ আর নিষেধ মহান আল্লাহর পক্ষ্য থেকে। যে আদেশ নিষেধের বাধ্যতা আর অবাধ্যতার মাঝেই একজন সত্যিকারের মুসলিম আর নামমাত্র মুসলিমের পার্থক্য! আপনার ভূরি ভূরি জ্ঞান নয় আল্লাহ দেখবেন আপনার action. আপনার ডেটিকেশন আপনার দ্বীনের প্রতি। আপনার সিরিয়াসনেস প্রতিটি আয়াত আত্মস্থ করায়!

সে সময়টা আসে যখন দ্বীনের পথে পথচলা আপনাকে শিখিয়ে দেবে এসব মেয়ে প্রীতি, টেম্পু চালানো, ফ্রি মিক্সিং, নন মাহরামকে তোড়াই কেয়ার করে অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা এসব কত তুচ্ছ। এসব দ্বীনের পথে কাজ করাকে ব্যাহত করে,  নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা নষ্ট করে, শয়তানকে মনের ভেতর অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেয়। ইসলামের সবগুলো ইশ্যুর মত এই ইস্যুটাও উপলব্ধির। দ্বীনের জন্য এগুলো ক্ষতিকর এবং শয়তানের জন্য ফিতনার দুয়ার খুলে দেওয়ার মত, এটা বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ হয়ত সবাইকে দেন না। এগুলো ফিতনা মনে করার মত অন্তরের বুঝ হয়ত সবার ভেতর থাকেনা! আল্লাহর হেদায়াত কারো কাছে বলে কয়ে আসেনা। একান্ত চেষ্টা, মহান রবের কাছে আকুতি আর শুদ্ধ নিয়্যতের মাধ্যমেই আমরা মহান আল্লাহর কাছে হেদায়াত আশা করতে পারি। ইনশাআল্লাহ আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করব আমাদের অন্তরে তিনি ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে গন্য করার তাক্বওয়াটুকু যেন দেন। আল্লাহ আমাদের অন্তরকে যেন শয়তানের জিম্মায় ছেড়ে না দেন। খুবই ক্ষুদ্র একটা জীবন, অল্প কিছু সময়। অর্থহীন কিছু ফ্যান্টাসি, রঙিন দুনিয়ার জাহেল ভাবাবেগ, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শয়তানী সুড়সুড়িতে অযাচিত সময়ক্ষেপণ করে আমরা যেন আল্লাহর নিকট লজ্জিত না হই। দিনশেষে আখিরাতের জন্য কিছু মূল্যবান পাথেয় নিয়েই যেন মহান রবের কাছে ফিরে যেতে পারি ,আমীন।

শেষকথাঃ কিছু বিষয়। 

  1. নন মাহরাম, ফ্রি মিক্সিং, এবং দ্বীনের খাতিরেও কতটুকু মেশা যাবে সে বিষয়ে সীমাটা জানা জরুরী। সবকিছুর একটা সীমা আছে। সীমার বাইরে গেলে শয়তানের খপ্পরে তো পড়তেই হবে। যেখানে কথা বলার কোন দরকারই নেই, যেখানে খামোখা শয়তানকে সুযোগ দেওয়াটা অর্থহীন একটা কাজ সেখানে নিজেকে বিরত রাখাই উত্তম।
  2. ফেসবুকে যারা ফিতনা অনুভব করেন তারা কি করবেন? ফ্রেন্ড লিস্টে এমন ফ্রেন্ড রাখা উচিত হবেনা যাদের উল্টাপাল্টা স্বভাব আছে। আপনি যে কাজটা অনুচিত মনে করেন সেটা অন্যের কাছেও নিশ্চয় আশা করবেন না। যেমন একটা হিজাবি বোন সে বিশ্বাস করে হিজাবই নারীর পর্দা! কিন্তু সে যখন বেপর্দা একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথে তোলা ছবিতে লাইক  আর “খুব ভাল হয়েছে” কমেন্ট করে বসে তখন অন্তরের আসল চেহারাটাই যেন বেরিয়ে আসে!
  3. ব্যক্তিগতভাবে ফিতনা অনুভব করলে ফ্রেন্ডলিস্টে নন মাহরাম ছেলে কিংবা মেয়ে এড না করাই উত্তম। নন মাহরামদের এড না করতে স্ট্রিক্টলি বলেছেন শেখ মুনাজ্জিদ। সূত্র
  4. জাহেল মেয়েরা নিজের সেরকম সেরকম ছবি আপলোড দেয় বলে দীনী বোনদেরও সেটা করতে হবে এটা আমাদের দ্বীনকে কোনভাবেই রিপ্রেজেন্ট করেনা। সেটা না করতেও বলা হয়েছে সূত্র

আল্লাহ আমাদের সবাইকে অনধাবনের তৌফিক দিন। আল্লাহ সবাইকে হেদায়াত দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের সাথে আমাদের অন্তরকে বেঁধে নেওয়ার শক্তি ও ঈমান দান করুন, আমীন।